ক্ষমা চাচ্ছি, ভারতে ইলিশ পাঠাতে পারব না: মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা
- আপডেট সময় : ০৯:২৩:৫৬ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ১৭ বার পড়া হয়েছে
ভারতে ইলিশ পাঠানো হবে না বলে সাফ জানিয়ে দিয়েছিন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা ফরিদা আখতার। এবং বলেছেন, আমরা ক্ষমা চাচ্ছি, কিন্তু ভারতে কোনো ইলিশ পাঠাতে পারব না। ইলিশ নিয়ে ভারতের কোনো ইস্যু সৃষ্টি করার দরকার নেই। ভারত সুসম্পর্ক চাইলে তিস্তার পানি বণ্টন সমস্যার সমাধান করা উচিৎ।
আজ শুক্রবার (১৩ সেপ্টেম্বর) ভারতীয় একটি সংবাদমাধ্যকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে মৎস্য উপদেষ্টা এ কথা বলেন।
উপদেষ্টা বলেন, আমরা দেখেছি আমাদের দেশের মানুষই ইলিশ খেতে পারেন না। কারণ, সব ভারতে পাঠানো হয়। যেগুলো থাকে সেগুলো অনেক দামে খেতে হয়। আমাদের এখানেও দুর্গোৎসব পালিত হয়। আমাদের জনগণ এটি উপভোগ (খেতে) করবে।
ফরিদা আখতার বলেন, এবারের দুর্গোৎসবে বাংলাদেশের হিন্দুধর্মাবলম্বীসহ অন্যান্য নাগরিকরা যেন ইলিশ খেতে পারেন সেটি নিশ্চিত করা হবে। ভারতের চেয়ে দেশের জনগণকেই প্রাধান্য দেওয়া হবে।
প্রতিবছর দুর্গাপূজার সময় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা চার হাজার টন ইলিশ ভারতে পাঠাতেন।
তার সেই উদ্যোগের সমালোচনা করে উপদেষ্টা ফরিদা আখতার বলেন, ভারতে মাছ পাঠানোর কোনো প্রয়োজনীয়তা ছিল না। ভারতের সঙ্গে ভালো সম্পর্কের কথা বলে তার মাছ পাঠানো ঠিক হয়নি। তিনি বাংলাদেশের মানুষের প্রয়োজনীয়তাকে উপেক্ষা করেছেন।
মৎস্য উপদেষ্টা আরও বলেন, ইলিশ নিয়ে ভারতের কোনো ইস্যু সৃষ্টি করার দরকার নেই। যদি তারা বাংলাদেশের সঙ্গে সুসম্পর্ক চায় তাহলে তাদের তিস্তার পানি বণ্টনের সমস্যার সমাধান করা উচিত।
এর আগে, গত ৩ সেপ্টেম্বর মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ খাতের সাংবাদিকদের সংগঠন ফিশারিজ অ্যান্ড লাইভস্টক জার্নালিস্ট ফোরামের (এফএলজেএফ) সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময়কালে ফরিদা আখতার বলেন, দুর্গাপূজা উপলক্ষে এবার বাংলাদেশ থেকে ভারতে কোনো ইলিশ মাছ যাবে না। এ ছাড়া আমরা কোনো মাংস আমদানি করতে চাচ্ছি না। এখন লাখ লাখ খামারি গবাদিপশু লালন- পালনের সঙ্গে জড়িত।
উপদেষ্টা বলেন, দেশের মানুষের চাহিদা মিটিয়ে তারপর ইলিশ বিদেশে রফতানি করা হবে। দেশের মানুষ ইলিশ পাবে না, আর রফতানি হবে, সেটা হতে পারে না। ফলে এবার দুর্গাপূজায়ও ভারতে যাতে কোনো ইলিশ না যায়, তার জন্য আমি বাণিজ্য মন্ত্রণালয়কে বলেছি।
এর আগে দুর্গাপূজা উপলক্ষে ইলিশ চেয়ে বাংলাদেশ সরকারের কাছে চিঠি পাঠিয়েছেন ভারতের মৎস্য ব্যবসায়ীরা। সেই চিঠির জবাবে গত ১১ সেপ্টেম্বর বুধবার পররাষ্ট্রবিষয়ক উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন বলেন, আমি কিছুক্ষণ আগে কাগজটা দেখেছি। এ বিষয়ে সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় সিদ্ধান্ত নেবে। আমরা তো আর মাছ রপ্তানির সিদ্ধান্ত নেই না।
ভারতীয় রপ্তানি প্রতিষ্ঠান ‘ফিশ ইমপোর্টার অ্যাসোসিয়েশন’ চিঠিতে লিখেছে, অত্যন্ত বিনয় এবং শ্রদ্ধার সঙ্গে আপনাকে (পররাষ্ট্র উপদেষ্টা) জানানো যাচ্ছে যে, আমরা ১৯৯৬ সাল থেকে বাংলাদেশ থেকে ইলিশ মাছ আমদানি করে আসছি। প্রতি বছর আমরা ভারতের পশ্চিমবঙ্গের পেট্রাপোল ল্যান্ড কাস্টমস স্টেশনের মাধ্যমে প্রায় ৫ হাজার মেট্রিক টন ইলিশ আমদানি করি।
‘দুর্ভাগ্যবশত, ২০১২ সালের জুলাইয়ে হঠাৎ করেই বাংলাদেশ সরকার ইলিশ মাছের রপ্তানি নিষিদ্ধ করে। এরপর থেকে আমরা নিষেধাজ্ঞা শিথিল করার জন্য তাদের কাছে চিঠি দিয়েছি, কিন্তু কোনো লাভ হয়নি।’
ভারতীয় রপ্তানি প্রতিষ্ঠানটির ভাষ্য, তবে গত ৫ বছর (সেপ্টেম্বর ২০১৯ থেকে শুরু করে সেপ্টেম্বর ২০২৩ পর্যন্ত), বাংলাদেশ সরকার একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ এবং সময়ের জন্য শুধু দুর্গাপূজার সময় ইলিশ মাছ রপ্তানির অনুমতি দেয়।
চিঠিতে বলা হয়েছে, এমন পরিস্থিতিতে আমরা আপনার (পররাষ্ট্র উপদেষ্টা) সদয় হস্তক্ষেপ কামনা করছি এবং দুর্গাপূজার জন্য ইলিশ মাছ রপ্তানির অনুমতি দেওয়ার জন্য অনুরোধ করছি। কেননা পশ্চিমবঙ্গ, আসাম এবং ত্রিপুরায় বাংলাদেশের ইলিশের প্রচুর চাহিদা রয়েছে।