”মন্ত্রীহীন’ সুনামগঞ্জ, জেলাজুড়ে আলোচনা
- আপডেট সময় : ১২:৩৮:৩৯ অপরাহ্ন, রবিবার, ১৪ জানুয়ারী ২০২৪ ১৬৩ বার পড়া হয়েছে
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর চেয়ে ১ লক্ষ ২২ হাজার ৯শ’ ভোট বেশি পেয়ে টানা চতুর্থ বারের মতো সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন শান্তিগঞ্জের ডুংরিয়া গ্রামের সন্তান এম এ মান্নান। সুনামগঞ্জ-৩ আসনের দুই উপজেলার কোনো কেন্দ্রেই পরাজিত হননি তিনি। জামানত হারিয়েছেন সাথে থাকা সকল প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী।নির্বাচনের আগে সরকারের পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী থাকলেও এমন নিরঙ্কুশ জয়ের পরও ডাক পাননি বর্তমান সরকারের মন্ত্রিসভায়। এরপর থেকেই ‘সাবেক পরিকল্পনামন্ত্রী’ হয়েছেন বর্তমানের এমপি এম এ মান্নান। মন্ত্রিসভা থেকে তাঁর এমন বিদায়ে হতভম্ব হয়েছেন শান্তিগঞ্জ-জগন্নাথপুরসহ সমস্ত জেলার মানুষ। যেখানে এম এ মান্নানকে অর্থ মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী হওয়ার স্বপ্ন দেখেছেন হাওর পাড়ের মানুষ সেখানে কোনো মন্ত্রণালয় না পাওয়া রীতিমত হতবাক করেছে সবাইকে।কেবল এমএম মান্নানই নন, সুনামগঞ্জের পাঁচটি আসনের চারটিতে আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী নির্বাচনে জয়ী হলেও কারো জায়গা হয়নি মন্ত্রিসভায়। এনিয়ে জেলাজুড়ে আলোচনা চলছে, আশংকা চলমান উন্নয়ন প্রকল্পগুলোর ভবিষ্যৎ নিয়েও। সুনামগঞ্জে নিজ দল আওয়ামী লীগ, দলের ভিতরে থাকা ভিন্ন মতাদর্শী রাজনীতিবিদ তো বটেই এম এ মান্নানের মন্ত্রিত্ব হারানোয় অবাক বনেছেন বিএনপি, জমিয়ত ও জামায়াতসহ অনেক বিরোধী রাজনীতির সমর্থকেরাও। কেন এমনটা হলো, এমন প্রশ্নই এখন জেলার প্রায় সকল মানুষের মুখে মুখে। যারা রাজনীতি বুঝেন, নানান দিক থেকে এসব প্রশ্নের উত্তর খোঁজার চেষ্টা করছেন তারা। গত চারদিন ধরে সুনামগঞ্জের সবচেয়ে বেশি আলোচনার বিষয় ছিলো পরিকল্পনামন্ত্রীর মন্ত্রিত্ব না পাওয়া। অনেকে কষ্ট শেয়ার করছেন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। বলছেন- মন্ত্রিত্ব না থাকায় ব্যাহত হবে সুনামগঞ্জের উন্নয়ন। এমনকি চলমান উন্নয়ন কাজেও ধীরগতি আসার শঙ্কা প্রকাশ করেছেন অনেকে। যেসব বড় বড় মেগা প্রকল্প বাস্তবায়নের স্বপ্ন দেখিয়েছিলেন মন্ত্রী মান্নান, সেসব স্বপ্নের প্রকল্প নিয়েও তৈরি হয়েছে ধোঁয়াশা।এম এ মান্নান মন্ত্রী থাকাকালীন অনেক উন্নয়ন কর্মকাণ্ড বাস্তবায়ন শুরু করেছেন। এসব উন্নয়ন কাজের কিছুটা শেষ হলেও অনেক কাজ এখনো চলমান। বঙ্গবন্ধু মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, সুনামগঞ্জ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, বাংলাদেশ শিল্প ও কারিগরি সহায়তা কেন্দ্র, হাওরের বুকের উপর দিয়ে সুনামগঞ্জ-নেত্রকোনার উড়ালপথ, শান্তিগঞ্জের উপজেলা পরিষদ চত্বরে মডেল মসজিদ, ধান গবেষণা ইন্সটিটিউট, নির্মাণাধীন বিভিন্ন সেতু, নার্সিং ইন্সটিটিউট, সিলেট-সুনামগঞ্জ আঞ্চলিক মহাসড়ক চার লেনে উন্নীত করণ, শাল্লা-আজমিরীগঞ্জ সড়কসহ অনেক উন্নয়ন কাজ চলমান।সাধারণ মানুষের ধারণা মন্ত্রিত্ব না থাকায় নির্মাণ কাজে কিছুটা ধীরগতি আসতে পারে এসব কাজে। এদিকে, সুনামগঞ্জ জেলাবাসীকে বিমানবন্দর স্থাপন ও রেললাইন সম্প্রসারণ করার যে স্বপ্ন দেখিয়েছিলেন এম এ মান্নান তা বাস্তবায়ন হবে কি না এ নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করেছেন অনেকে। তারা মনে করছেন, সুনামগঞ্জ জেলায় আগে যা উন্নয়ন হয়েছে তা কিছুটা হলেও কমে যাবে।নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক কলেজ শিক্ষক বলেন, এম এ মান্নান মন্ত্রিত্ব না পাওয়ায় অনেকে দেখছি খুশি হয়েছেন। কিন্তু তারা কী একবারও ভেবেছেন সুনামগঞ্জের আর উন্নয়ন হবে কি না? কার্যত আগের মতো বড় বড় মেগা প্রকল্প সুনামগঞ্জের আসবে কি না তা নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করছি। প্রকৃত পক্ষে সুনামগঞ্জের উন্নয়ন ব্যাহত হবে।পাগলা বাজারের ব্যবসায়ী হাকিম প্রহল্লাদ দেবনাথ বলেন, এম এ মান্নান সাহেব মন্ত্রিত্ব না পাওয়ায় আমি অবাক হয়েছি। সমস্ত পাগলাবাসীও আমার মতো অবাক হয়েছেন। আমরা এখনো আশাবাদী, কোনো সুযোগ থাকলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাঁকে কোনো না কোনো মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব দেবেন। সুনামগঞ্জের উন্নয়নে এম এ মান্নান সাহেব মন্ত্রী থাকা খুবই দরকারি।আহমেদ সাইদ নামের একজন যুব জমিয়ত নেতা তার ফেসবুকে এম এ মান্নানকে নিয়ে ব্যক্তিগত অনুভূতি প্রকাশ করে লিখেছেন- অপরিচিত এম এ মান্নান, একজন এমপি এম এ মান্নান, একজন প্রতিমন্ত্রী এম এ মান্নান, একজন মন্ত্রী এম এ মান্নান। কর্মপাগল এম এ মান্নান সুনামগঞ্জবাসীর জন্য যা করেছেন তা সুনামগঞ্জবাসী শত বছর মনে রাখবে। জনতার এম এ মান্নান, ৩৬ জনের তালিকায় মন্ত্রী না থাকলে ও ৪২ লক্ষ মানুষের অন্তরে সম্মানের আসনে থাকবেন ইনশাআল্লাহ।তবে সাবেক পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান বলেছেন, সুনামগঞ্জের যেসব কাজ ইতোমধ্যে টেন্ডার হয়ে গেছে, অর্থ ছাড় দেওয়া হয়েছে সেসব কাজ তার গতিতেই চলবে। এ ধরনের কোনো কাজ থেমে থাকবে না। আমি তো আছিই। সব কাজ হবে। আরও উন্নয়ন হবে। উড়াল সড়ক, বিশ্ববিদ্যালয়, চার লেন সড়ক, ধান গবেষণা ইন্সটিটিউট, বাংলাদেশ শিল্প ও কারিগরি সহায়তা কেন্দ্র (বিটাক), মেডিকেল কলেজ, শাল্লা-আজমিরীগঞ্জ সড়ক সবই হবে। কিছুটা চিন্তা আছে রেললাইন ও বিমান বন্দর নিয়ে। বাকি সব চলমান কাজ আগের মতোই হবে। শঙ্কিত হওয়ার কিছু নাই।