ঢাকা ০৪:৪৭ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ০৭ জুন ২০২৫, ২৩ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
শিরোনাম ::
পবিত্র ঈদুল আযহা উপলক্ষ্যে সিলেটবাসীকে নাহিদ আহমদ শুভেচ্ছা ধুমপান নিয়ন্ত্রণে জনসচেতনতা অপরিহার্য -ড. মুস্তাফিজুর রহমান তারেক রহমানের পক্ষ থেকে রিকশা চালকের হাতে বিমানের টিকেট তুলে দিলেন কয়েস লোদী সিলেট অনলাইন প্রেসক্লাবের সদস্য হলেন ১৬ জন সাংবাদিক আওয়ামীলীগের ডিএনএ-তে গণতন্ত্র নাই – সালাউদ্দিন আহমদ বরখাস্ত/অব্যাহতি প্রাপ্ত সাবেক সেনাসদস্যদের বিক্ষোভ ও বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর অবস্থান সংশোধনী বিজ্ঞপ্তি এবার শাহজালাল মাজারের ওরসে অসামাজিক ও অনৈসলামিক কাজ হবে না : এসএমপি কমিশনার বিপিজেএ সিলেট বিভাগীয় কমিটির সভাপতি পাভেল ও সাধারণ সম্পাদক রাব্বী নির্বাচিত কোতোয়ালী মডেল থানা পুলিশের অভিযানে ডাকাতির প্রস্তুতিকালে দেশীয় অস্ত্রসহ ০৬ (ছয়) ডাকাত গ্রেফতারঃ

ব্যবস্থাপকের যোগসাজসে বিক্রি হচ্ছে বাগান জমি !

সিলেটের ঐতিহ্যবাহী তারাপুর চা বাগানের ‘রক্ষক যখন বক্ষক’

বিশেষ প্রতিবেদন:
  • আপডেট সময় : ০২:৪৯:৫৩ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৮ নভেম্বর ২০২৪ ৭৩ বার পড়া হয়েছে

মন্দিরের উন্নয়ন ও শ্রমিকদের বেতন দেওয়ার নামে গোপনে বিক্রি করা হচ্ছে সিলেটের ঐতিহ্যবাহী তারাপুর চা বাগানের ভূমি। টাকার লালসে এসব ভূমি বিক্রি করছেন বাগানের ম্যানেজার রিংকু চক্রবর্তী। বিক্রি করা বাগানের ভূমিতে ইতিমধ্যে বসতি গড়ে ওঠেছে। কোথাও নির্মিত হয়েছে ইমারত। কিছু কিছু স্থানে যথারীতি আবাসিক এলাকা গড়ে ওঠেছে। অথচ চা বাগানের ভূমি রক্ষায় ইতিমধ্যে আদালত থেকে একটি কমিটি করে দেওয়া হয়। কিন্তু বাগানের ব্যবস্থাপক সেই কমিটিকে ঘুমের ঘরে রেখে নিজেই ভূমি বিক্রি করে কাঁড়ি কাঁড়ি টাকা কামাচ্ছেন।

গত ৫ আগস্ট সরকার পতনের আগে আওয়ামীলীগ নেতাদের ওপর দখলদারিত্বের দায় চাপিয়ে নিজেকে আড়াল করেন ম্যানেজার রিংকু চক্রবর্তী।

সরেজমিন দেখা গেছে, তারাপুর চা বাগানে অনেকেই বসতি নির্মাণ করেছেন। সেই সঙ্গে চা বাগানের লাগুয়া পাকা ঘর দিয়ে দোকান কোটা এমনকি স্থায়ীভাবে মার্কেট তৈরী করা হয়েছে।

বাসিন্দাদের অনেকেই জানান, তারা বাগান ম্যানেজারের কাছ থেকে বিভিন্ন পরিমাণে নগদ টাকা দিয়ে জমি কিনে বাড়ি তৈরী করেছেন। কেউ কেউ বলেন, টাকা দিয়ে তারা ৯০ বছরের জন্য বাগানের জায়গা ইজারা নিয়ে বাড়ি তৈরী করেছেন।

তাদের অনেকে টাকার পরিমাণ উল্লেখ করে বলেন, বাগানের ব্যবস্থাপক রিংকু চক্রবর্তীর কাছ থেকে নগদ অর্থে ভূমির মালিক হয়েছেন। এসব ভূমি বিক্রি করতে অনেকে সাইনবোর্ড টানিয়ে রেখেছেন।

অনুসন্ধানে করে জানা গেছে, তারাপুর চা বাগান দেবোত্তর সম্পত্তি হওয়ায় দখল হারান রাগিব আলী। আদালত থেকে বাগানের দায়িত্ব পান সেবায়েত পঙ্কজ দাস। কিন্তু রাগির আলী কারাগার থেকে বেরিয়ে রিভিউ করার পর পঙ্কজকে বাদ দিয়ে সেবায়েত পরিবারের একজনকে প্রতিনিধি হিসেবে রাখেন। আদালত থেকে কমিটি করে দেওয়া হয়। ওই কমিটিতে রয়েছেন জেলা জজ, জেলা প্রশাসক, পুলিশ প্রশাসন, সিটি করপোরেশন, আইনজীবী সমিতিসহ বিভিন্ন দফতরের একজন করে প্রতিনিধি। কিন্তু কমিটিকে পাশ কাটিয়ে একাই অর্থ উপার্জনের লালসে নামমাত্র মূল্যে দখলদারিত্ব চা বাগানের ভূমি বিক্রি করে আসছেন বাগান ব্যবস্থাপক রিংকু চক্রবর্তী। ক্রমশ; বাগানের ভূমি বিক্রি করায় বেহাত হয়েছে তারাপুর চা বাগানের সাড়ে ৩শ’ একর ভূমি। বুধবার কমিটির সদস্যরা বাগান সরেমজিন পরিদর্শনে যান। কিন্তু পরিদর্শনে যাওয়া কর্মকর্তাদের সুন্দর করে বুঝিয়ে চা পাতা উপহার দিয়ে বিদায় করেন বাগান ব্যবস্থাপক।

ব্যবস্থাপক রিংকু চক্রবর্তী জানান, তারাপুর চা বাগানের ৫শ’ একর জমির মধ্যে ১৩০ একর ধরে রাখতে পারছি। বাকি সব অবৈধ দখলে আছে। ইতিমপূর্বে জেলা প্রশাসক উচ্ছেদ অভিযান চালালেও পরে তা আবারও দখল হয়ে যায়।

তিনি বলেন, দেবোত্তর সম্পত্তি বিক্রি করা যায় না, তবে আত্মরক্ষার জন্য আমরা এখানে শ্রমিকদের ঘর বানিয়ে দিই। মেডিক্যাল কলেজের সামনে ২০টি দোকান আছে। তবে দেবোত্তর সম্পতির উপর স্থাপনা সবই অবৈধ। কাগজে কলমে ৩২৩. ৮ একরের মধ্যে ১৩০ একর বাগানের দখলে আছে। নিজে জায়গা বিক্রি করলেও মৌখিকভাবে কাউকে বসান না বলে দাবি করেন তিনি। অথচ তার লিখিত কাগজেই বসতি গড়েছেন অনেকে।

এদিকে, আওয়ামীলীগ সরকার ক্ষমতায় থাকাকালে মন্দির ও চা বাগানের শ্রমিকদের নাম ভাঙ্গিয়ে তারাপুর চা বাগানের টিলা কেটে দোকান কোটা নির্মাণ করে ভাড়া দেন রিংকু চক্রবর্তী। স্থানীয় ৮নং ওয়ার্ডের সাবেক দাপুটে কাউন্সিলর জগদীশ দাসকে হাত করে নিজে লাভবান হন রিংকু। স্থানীয় করেরপাড়া ব্রিজ সংলগ্ন এলাকায় শিমুল ঘোষের কাছে জেএল-৭৬, খতিয়ান-১৭, দাগ নং-৯৭ দাগের ৫০ ফুট ও ২০ ফুটের দোকান কোটা বাবদ ৫ লাখ টাকা নেন ম্যানেজার রিংকু। এখানে সাক্ষি রাখেন স্থানীয় কাউন্সিলর জগদীশ দাসকে। ২০২৩ সালের ৩০ আগস্ট অঙ্গীকার নামায় স্বাক্ষর করেন রিংকু।

এদিকে, গত কয়েকমাস আগে দোকান কোটা বন্ধে এবং অবৈধ সুবিধাভোগীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণে জেলা প্রশাসকের কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন এলাকার বাসিন্দারা।

জানা গেছে, দেবোত্তর সম্পত্তি হওয়ার কারণে রাগীব আলীর হাত ছাড়া হয় তারাপুর চা বাগান। আদালত থেকে বাগানটির দায়িত্ব পান সেবায়েত পঙ্কজ দেবনাথ। তিনি বাগানটি চালাতে ব্যর্থ হন। এখন কমিটি পরিচালনা করছে বাগান। যে কারণে অর্থ সংকটে জানুয়ারি থেকে বন্ধ রয়েছে বাগানের সব কার্যক্রম। আর ঢিলেঢালা মালিকানার কারণে বাগান হয়েছে বিবর্ণ। এতোদিন ক্ষমতাসীন আওয়ামীলীগ নেতারা বাগানের চারদিক দখলে ব্যস্ত ছিলেন। এবার ম্যানেজার নিজেই ভক্ষকের ভূমিকায় অবতীর্ণ বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা।

আর চা শ্রমিকদের কল্যাণ ও মন্দিরের নামে বাগানের জায়গা বিক্রি ও টিলা কেটে দোকানকোটা নির্মাণে সরাসরি জড়িত বাগান ব্যবস্থাপক রিংকু চক্রবর্তী।

নিউজটি শেয়ার করুন

আপলোডকারীর তথ্য
ট্যাগস :

ব্যবস্থাপকের যোগসাজসে বিক্রি হচ্ছে বাগান জমি !

সিলেটের ঐতিহ্যবাহী তারাপুর চা বাগানের ‘রক্ষক যখন বক্ষক’

আপডেট সময় : ০২:৪৯:৫৩ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৮ নভেম্বর ২০২৪

মন্দিরের উন্নয়ন ও শ্রমিকদের বেতন দেওয়ার নামে গোপনে বিক্রি করা হচ্ছে সিলেটের ঐতিহ্যবাহী তারাপুর চা বাগানের ভূমি। টাকার লালসে এসব ভূমি বিক্রি করছেন বাগানের ম্যানেজার রিংকু চক্রবর্তী। বিক্রি করা বাগানের ভূমিতে ইতিমধ্যে বসতি গড়ে ওঠেছে। কোথাও নির্মিত হয়েছে ইমারত। কিছু কিছু স্থানে যথারীতি আবাসিক এলাকা গড়ে ওঠেছে। অথচ চা বাগানের ভূমি রক্ষায় ইতিমধ্যে আদালত থেকে একটি কমিটি করে দেওয়া হয়। কিন্তু বাগানের ব্যবস্থাপক সেই কমিটিকে ঘুমের ঘরে রেখে নিজেই ভূমি বিক্রি করে কাঁড়ি কাঁড়ি টাকা কামাচ্ছেন।

গত ৫ আগস্ট সরকার পতনের আগে আওয়ামীলীগ নেতাদের ওপর দখলদারিত্বের দায় চাপিয়ে নিজেকে আড়াল করেন ম্যানেজার রিংকু চক্রবর্তী।

সরেজমিন দেখা গেছে, তারাপুর চা বাগানে অনেকেই বসতি নির্মাণ করেছেন। সেই সঙ্গে চা বাগানের লাগুয়া পাকা ঘর দিয়ে দোকান কোটা এমনকি স্থায়ীভাবে মার্কেট তৈরী করা হয়েছে।

বাসিন্দাদের অনেকেই জানান, তারা বাগান ম্যানেজারের কাছ থেকে বিভিন্ন পরিমাণে নগদ টাকা দিয়ে জমি কিনে বাড়ি তৈরী করেছেন। কেউ কেউ বলেন, টাকা দিয়ে তারা ৯০ বছরের জন্য বাগানের জায়গা ইজারা নিয়ে বাড়ি তৈরী করেছেন।

তাদের অনেকে টাকার পরিমাণ উল্লেখ করে বলেন, বাগানের ব্যবস্থাপক রিংকু চক্রবর্তীর কাছ থেকে নগদ অর্থে ভূমির মালিক হয়েছেন। এসব ভূমি বিক্রি করতে অনেকে সাইনবোর্ড টানিয়ে রেখেছেন।

অনুসন্ধানে করে জানা গেছে, তারাপুর চা বাগান দেবোত্তর সম্পত্তি হওয়ায় দখল হারান রাগিব আলী। আদালত থেকে বাগানের দায়িত্ব পান সেবায়েত পঙ্কজ দাস। কিন্তু রাগির আলী কারাগার থেকে বেরিয়ে রিভিউ করার পর পঙ্কজকে বাদ দিয়ে সেবায়েত পরিবারের একজনকে প্রতিনিধি হিসেবে রাখেন। আদালত থেকে কমিটি করে দেওয়া হয়। ওই কমিটিতে রয়েছেন জেলা জজ, জেলা প্রশাসক, পুলিশ প্রশাসন, সিটি করপোরেশন, আইনজীবী সমিতিসহ বিভিন্ন দফতরের একজন করে প্রতিনিধি। কিন্তু কমিটিকে পাশ কাটিয়ে একাই অর্থ উপার্জনের লালসে নামমাত্র মূল্যে দখলদারিত্ব চা বাগানের ভূমি বিক্রি করে আসছেন বাগান ব্যবস্থাপক রিংকু চক্রবর্তী। ক্রমশ; বাগানের ভূমি বিক্রি করায় বেহাত হয়েছে তারাপুর চা বাগানের সাড়ে ৩শ’ একর ভূমি। বুধবার কমিটির সদস্যরা বাগান সরেমজিন পরিদর্শনে যান। কিন্তু পরিদর্শনে যাওয়া কর্মকর্তাদের সুন্দর করে বুঝিয়ে চা পাতা উপহার দিয়ে বিদায় করেন বাগান ব্যবস্থাপক।

ব্যবস্থাপক রিংকু চক্রবর্তী জানান, তারাপুর চা বাগানের ৫শ’ একর জমির মধ্যে ১৩০ একর ধরে রাখতে পারছি। বাকি সব অবৈধ দখলে আছে। ইতিমপূর্বে জেলা প্রশাসক উচ্ছেদ অভিযান চালালেও পরে তা আবারও দখল হয়ে যায়।

তিনি বলেন, দেবোত্তর সম্পত্তি বিক্রি করা যায় না, তবে আত্মরক্ষার জন্য আমরা এখানে শ্রমিকদের ঘর বানিয়ে দিই। মেডিক্যাল কলেজের সামনে ২০টি দোকান আছে। তবে দেবোত্তর সম্পতির উপর স্থাপনা সবই অবৈধ। কাগজে কলমে ৩২৩. ৮ একরের মধ্যে ১৩০ একর বাগানের দখলে আছে। নিজে জায়গা বিক্রি করলেও মৌখিকভাবে কাউকে বসান না বলে দাবি করেন তিনি। অথচ তার লিখিত কাগজেই বসতি গড়েছেন অনেকে।

এদিকে, আওয়ামীলীগ সরকার ক্ষমতায় থাকাকালে মন্দির ও চা বাগানের শ্রমিকদের নাম ভাঙ্গিয়ে তারাপুর চা বাগানের টিলা কেটে দোকান কোটা নির্মাণ করে ভাড়া দেন রিংকু চক্রবর্তী। স্থানীয় ৮নং ওয়ার্ডের সাবেক দাপুটে কাউন্সিলর জগদীশ দাসকে হাত করে নিজে লাভবান হন রিংকু। স্থানীয় করেরপাড়া ব্রিজ সংলগ্ন এলাকায় শিমুল ঘোষের কাছে জেএল-৭৬, খতিয়ান-১৭, দাগ নং-৯৭ দাগের ৫০ ফুট ও ২০ ফুটের দোকান কোটা বাবদ ৫ লাখ টাকা নেন ম্যানেজার রিংকু। এখানে সাক্ষি রাখেন স্থানীয় কাউন্সিলর জগদীশ দাসকে। ২০২৩ সালের ৩০ আগস্ট অঙ্গীকার নামায় স্বাক্ষর করেন রিংকু।

এদিকে, গত কয়েকমাস আগে দোকান কোটা বন্ধে এবং অবৈধ সুবিধাভোগীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণে জেলা প্রশাসকের কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন এলাকার বাসিন্দারা।

জানা গেছে, দেবোত্তর সম্পত্তি হওয়ার কারণে রাগীব আলীর হাত ছাড়া হয় তারাপুর চা বাগান। আদালত থেকে বাগানটির দায়িত্ব পান সেবায়েত পঙ্কজ দেবনাথ। তিনি বাগানটি চালাতে ব্যর্থ হন। এখন কমিটি পরিচালনা করছে বাগান। যে কারণে অর্থ সংকটে জানুয়ারি থেকে বন্ধ রয়েছে বাগানের সব কার্যক্রম। আর ঢিলেঢালা মালিকানার কারণে বাগান হয়েছে বিবর্ণ। এতোদিন ক্ষমতাসীন আওয়ামীলীগ নেতারা বাগানের চারদিক দখলে ব্যস্ত ছিলেন। এবার ম্যানেজার নিজেই ভক্ষকের ভূমিকায় অবতীর্ণ বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা।

আর চা শ্রমিকদের কল্যাণ ও মন্দিরের নামে বাগানের জায়গা বিক্রি ও টিলা কেটে দোকানকোটা নির্মাণে সরাসরি জড়িত বাগান ব্যবস্থাপক রিংকু চক্রবর্তী।