ঢাকা ০২:০৯ অপরাহ্ন, বুধবার, ১৬ অক্টোবর ২০২৪, ১ কার্তিক ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
শিরোনাম ::
খুলনার সাবেক এমপি রশীদুজ্জামান মোড়ল গ্রেপ্তার বিয়ানীবাজার থানার এসআই আসাদুর রহমানের বিরুদ্ধে প্রবাসীর স্ত্রীর অভিযোগ মধ্যরাতে হঠাৎ উত্তপ্ত রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়; সড়ক অবরোধ, বখাটে দু’জন আটক সিলেট উইমেনস জার্নালিস্ট ক্লাবের সাংগঠনিক সম্পাদকের বাবার মৃত্যু, শোক প্রকাশ নেতাকর্মীদের সিলেট জেলা ও মহানগর যুবদলের সতকর্তা সিলেট বোর্ডে পাসের হার ৮৫.৩৯, জিপিএ-৫ পেয়েছেন ৬৬৯৮ জন সন্ত্রাসী ও চাঁদাবাজদের বিরুদ্ধে সিলেটে বিক্ষোভ মিছিল সিলেট সিটি করপোরেশনের সাবেক প্যানেল মেয়র ও কাউন্সিলর তৌফিক বক্স গ্রেপ্তার জামাতে ইসলামীর রাজনীতি: গাজী আব্দুল কাদির মুকুল সরকারি চাকরিতে পুরুষের ক্ষেত্রে ৩৫ ও নারীর ক্ষেত্রে ৩৭ বছর করার সুপারিশ

সর্বকালের সর্ব নিকৃষ্টতম বাঙালী শেখ হাসিনা-গাজী আব্দুল কাদির মুকুল

গাজী আবদুল কাদির মুকুল
  • আপডেট সময় : ০৭:০৮:৫০ অপরাহ্ন, রবিবার, ২৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ৩৯ বার পড়া হয়েছে

বাংলাদেশের ইতিহাসে, যখনই আওয়ামীলীগ রাষ্ট্রক্ষমতায় এসেছে, তারা সবসময় সারাদেশে স্বৈরতন্ত্র কায়েম করে দাপটের সাথে ত্রাসের রাজত্ব সৃষ্টি করেছে। এমনকি জটিল ও কঠিন ষড়যন্ত্র করে দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বকে বিক্রি করে দিয়ে জনসাধারণকে একপ্রকার জিম্মি করে ফেলেছিল। বিশেষ করে তাদের শাসনামলে ভারতীয় ষড়যন্ত্র ও শোষণের মুখে বাংলাদেশ কতটা অসহায় ছিল, তা সচেতন দেশবাসীর অজানা নয়। বস্তুত, তখন পরিস্থিতি এমন ছিল যে দেশের কোনো সামর্থ্যই ছিল না এই গোলামির বেড়াজাল থেকে বেরিয়ে আসার। আওয়ামীলীগের নেতাদের একমাত্র লক্ষ্য ছিল যেকোনো উপায়ে ক্ষমতা দখল করা, তা যদি ভারতের কাছে আত্মসমর্পণ করেও হয়। ভারত যা চেয়েছিল, শেখ মুজিবুর রহমান ও তার কন্যা শেখ হাসিনা তার চেয়েও বেশি দিয়েছে। মুজিবকন্যা হাসিনা এটি প্রকাশ্যে স্বীকারও করেছেন। ভারতের প্রতি তাদের এমন নতজানু চরিত্র দেশপ্রেমী জনগণ জানে। তাদের এই ন্যাক্কারজনক স্বৈরতন্ত্রের সূচনা হয়েছিল খোদ শেখ মুজিবের শাসনকাল থেকেই। এদের স্বৈরাচারী আচরণে এবং নিষ্ঠুরতায় দেশবাসী ত্যক্ত-বিরক্ত হয়ে উঠেছিল। শেখ মুজিবের দেখানো ফ্যাসিস্ট শাসন প্রক্রিয়া থেকে তার কন্যা শেখ হাসিনা কখনোই বের হতে পারেননি; বরং আরও বহু গুণ বেশি স্বৈরাচারী হয়ে উঠেছিলেন। একজন মানুষকে অমানুষ হতে হলে যতটুকু পাপ করতে হয়, শেখ হাসিনা তা সব অতিক্রম করে গিয়েছিলেন। তার পাপের বোঝা এত ভারী ছিল যে, কোনো সুস্থ মস্তিষ্কসম্পন্ন ব্যক্তি তাকে মানুষ বলে বিবেচনা না করে পশুর স্তরভুক্ত বললেও অত্যুক্তি হবে না। হাসিনার চরিত্র বাংলাদেশের ইতিহাসের গোপন বিষয় নয়; এর প্রমাণ বহু দলিল ও নথিতে রয়েছে। তার গুরুতর অপরাধের তালিকাও দীর্ঘ। তিনি বাংলাদেশের নব্য হিটলার হিসেবে পরিণত হয়েছিলেন।

১৯৮১ সালে, যখন হাসিনা আওয়ামীলীগের সভানেত্রী হন,তখন তিনি বিবিসির বিশিষ্ট সাংবাদিক সিরাজুর রহমানের সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন যে, তিনি রাজনীতিতে এসেছেন জাতির কাছ থেকে তার বাবার এবং পরিবারের হত্যার প্রতিশোধ নেয়ার জন্য। সুতরাং,হাসিনার মতো ক্ষুদ্র মনের এবং প্রতিহিংসাপরায়ণ একজন লোক ক্ষমতার গদিতে বসলে যা হওয়ার কথা, সেটাই হয়েছে। দুর্বৃত্ত হাসিনার বহুমুখী দুষ্ট চরিত্রের অন্যতম কয়েকটি বৈশিষ্ট্য হলো-প্রচণ্ড মিথ্যাচারিতা, মানুষ হত্যার নেশা,অর্থ ও ক্ষমতার প্রতি লোভ, প্রতিশোধপরায়ণতা, পরনিন্দা ও কুৎসা রটনা, অশালীন ভাষায় গালিগালাজ, প্রতারণা, আক্রোশ ইত্যাদি। তার এই ন্যক্কারজনক চরিত্রের সবকিছু প্রমাণসহ লেখা হলে, প্রতিটি বিষয় নিয়ে একটি করে বৃহৎ বই লেখা যাবে।

তবে, সংক্ষেপে বলতে গেলে বলা যায়, হাসিনার আচরণ সর্বদা অত্যন্ত বিভাজনকারী, বিতর্কিত এবং নিন্দনীয় ছিল। মিথ্যাবাদী হিসেবে তিনি অত্যন্ত পারদর্শী ছিলেন এবং মিথ্যা বলাই তার অন্যতম বড় হাতিয়ার ছিল। এছাড়া তার রক্তপিপাসু এবং হিংস্র মনোভাব সবসময়ই মানুষ খুন করার মাধ্যমে বিকৃত সন্তুষ্টি পেয়েছে। এর অসংখ্য দৃষ্টান্ত ইতিহাসে রয়েছে।

শেষ পর্যন্ত, ৫ আগস্ট ২০২৪ সালে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনের সময়, তিনি দেশ থেকে পলায়নের আগে প্রায় ১০০০ মানুষ হত্যা করেছেন, যা দেশের চিন্তাশীল মহল গণহত্যা হিসেবে অভিহিত করেছেন। তারই দলের নেতা সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত বলেছিলেন,’বাঘে ধরলে ছাড়ে, হাসিনা ধরলে ছাড়ে না।’ এতে প্রমাণ হয়, হিংস্র প্রাণী বাঘের ভিতরও দয়া থাকতে পারে, কিন্তু হাসিনা ছিলেন পশুর চেয়েও নিকৃষ্ট, যার মধ্যে মানবিক দয়া-মায়া ছিল না। হাসিনা তার সন্ত্রাসী যুবলীগ ও ছাত্রলীগকে কঠোরভাবে আদেশ দিয়েছিলেন,’একটার বদলে দশটা লাশ চাই।’ তার এই উক্তি থেকেই বোঝা যায়, তিনি হিংস্র হায়েনার মতো খুনের নেশায় কতটা উন্মাদ হয়ে উঠেছিলেন।

১৯৯৬ সালের মেয়াদে তার দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতি, লুটপাট এবং স্বৈরাচার এতটাই নিদারুণ হয়ে উঠেছিল যে, তখন জনগণের শেষ ভরসা পুলিশ, প্রশাসন, সেনাবাহিনী এবং আদালতকেও সন্ত্রাসীদের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছিল। তিনি ধ্বংসের শক্তিতে দক্ষ ছিলেন, গঠনের নয়। তখন দেশের মাননীয় আদালত হাসিনাকে ‘রং হেডেড’ ব্যক্তি হিসেবে আখ্যায়িত করেছিলেন, যা বাংলাতে-মানসিক বিকৃত, পাগল বা উন্মাদ বলে বোঝানো হয়। সে সময় বিশিষ্ট মহল থেকে তার মানসিক চিকিৎসার প্রয়োজন ছিল বলে পরামর্শ দেওয়া হয়েছিল। কেননা, মারাত্মক প্রতিহিংসা, প্রতিশোধ, গুম-খুন ইত্যাদি বাসনার প্রবৃত্তি দ্বারা হাসিনা পরিচালিত হতেন, কিন্তু সৎ বা সাধু কোনো পরামর্শেই কান দেওয়া তার চরিত্রের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ ছিল না।

হাসিনা প্রতারণায়ও ছিলেন অতুলনীয়। ১৯৯৬ সালের নির্বাচনী প্রচার অভিযানে, তিনি ওমরা পালন করে এসে সেই পোশাক পরিহিত অবস্থায় নির্বাচনী প্রচার চালিয়ে যান। জনগণের কাছে কান্নাকাটি করে আওয়ামীলীগের অতীত ভুল-ভ্রান্তির জন্য করজোড়ে ক্ষমা প্রার্থনা করেন এবং একবারের জন্য ক্ষমতায় আসার সুযোগ চান। কিন্তু নির্বাচনে জয়লাভের পর তার মাথার পট্টি এবং হাতে থাকা তসবিহ উধাও হয়ে যায়, আর জনগণকে কলার খোলসের মতো ছুঁড়ে ফেলে দেন। অন্যদিকে, এরশাদের শাসনামলে তিনি বলেছিলেন, ‘যে রাজনৈতিক দল ১৯৮৬ সালের প্রহসনমূলক নির্বাচনে অংশ নেবে, সেই দল জাতীয় বেইমান হিসেবে চিহ্নিত হবে।’ অথচ পরের দিনই তিনি নিজেই ঘোষণা দেন যে তার দল আওয়ামীলীগ নির্বাচনে অংশ নেবে। নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা যায়, এরশাদের কাছ থেকে রাতের আঁধারে বিশাল অঙ্কের টাকা নিয়ে তিনি সেই নির্বাচনে গিয়েছিলেন। এজন্যই অনেকে তাকে নির্লজ্জ মিথ্যাবাদী এবং ক্ষমতালোভী বলে আখ্যায়িত করেছেন।

হাসিনার অপরাধের তালিকা দীর্ঘ এবং তিনি আওয়ামীলীগ -বাকশালীদের দ্বারা সবসময় মিথ্যা কথা বলে তার দুষ্ট চরিত্র ঢাকার চেষ্টা করে এসেছেন। তবে মিথ্যার মুখোশ একদিন না একদিন উন্মোচিত হবেই, কারণ সত্যকে চিরকাল চেপে রাখা যায় না। বিগত ১৫ বছরে তিনি বাংলাদেশে যে বর্বোচিত অপকর্ম চালিয়েছেন, তার তালিকা অনেক লম্বা। তার সবচেয়ে জঘন্যতম ও মারাত্মক অপরাধগুলির মধ্যে রয়েছে-গণতন্ত্র হত্যা, মানবাধিকার লঙ্ঘন, খুন-গুম, ভোটাধিকার হরণ, বিচার বিভাগের স্বাধীনতা হরণ, আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় ব্যর্থতা, বাকস্বাধীনতা হরণ, লুটপাট এবং চোর-ডাকাতদের প্রতিপালন ইত্যাদি অন্যতম।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে, ৫ আগস্ট তিনি দেশ থেকে পলায়ন করেন, যা জনগণের কাছে অপ্রত্যাশিত ছিল না। এটি নিশ্চিত ছিল যে, একদিন না একদিন তার পতন হবে, কারণ ইতিহাস সাক্ষী দেয় যে স্বৈরাচারী শাসকরা কখনোই চিরস্থায়ী হয় না। ভাগ্যিস পরাজিত ফ্যাসিস্ট হাসিনা প্রাণ বাঁচিয়ে পালিয়ে গিয়েছিলেন। অন্যথায়, ছাত্র-জনতা তাকে জাহান্নামে পাঠিয়ে দিতো।

সুতরাং, যেভাবেই হোক না কেন, সর্বকালের সর্ব নিকৃষ্টতম বাঙালি শেখ হাসিনাকে বাংলাদেশের আদালতের কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়ে বিচারের মাধ্যমে সর্বোচ্চ শাস্তির বিধান নিশ্চিত করতে হবে, সেটাই দেশবাসীর প্রাণের দাবি। তিনি বিশ্বের যেখানেই থাকুন না কেন, সরকারকে তাকে দেশে ফিরিয়ে আনতে হবে।

লেখক: প্রাবন্ধিক, ইংল্যান্ড প্রবাসী

নিউজটি শেয়ার করুন

আপলোডকারীর তথ্য
ট্যাগস :

সর্বকালের সর্ব নিকৃষ্টতম বাঙালী শেখ হাসিনা-গাজী আব্দুল কাদির মুকুল

আপডেট সময় : ০৭:০৮:৫০ অপরাহ্ন, রবিবার, ২৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪

বাংলাদেশের ইতিহাসে, যখনই আওয়ামীলীগ রাষ্ট্রক্ষমতায় এসেছে, তারা সবসময় সারাদেশে স্বৈরতন্ত্র কায়েম করে দাপটের সাথে ত্রাসের রাজত্ব সৃষ্টি করেছে। এমনকি জটিল ও কঠিন ষড়যন্ত্র করে দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বকে বিক্রি করে দিয়ে জনসাধারণকে একপ্রকার জিম্মি করে ফেলেছিল। বিশেষ করে তাদের শাসনামলে ভারতীয় ষড়যন্ত্র ও শোষণের মুখে বাংলাদেশ কতটা অসহায় ছিল, তা সচেতন দেশবাসীর অজানা নয়। বস্তুত, তখন পরিস্থিতি এমন ছিল যে দেশের কোনো সামর্থ্যই ছিল না এই গোলামির বেড়াজাল থেকে বেরিয়ে আসার। আওয়ামীলীগের নেতাদের একমাত্র লক্ষ্য ছিল যেকোনো উপায়ে ক্ষমতা দখল করা, তা যদি ভারতের কাছে আত্মসমর্পণ করেও হয়। ভারত যা চেয়েছিল, শেখ মুজিবুর রহমান ও তার কন্যা শেখ হাসিনা তার চেয়েও বেশি দিয়েছে। মুজিবকন্যা হাসিনা এটি প্রকাশ্যে স্বীকারও করেছেন। ভারতের প্রতি তাদের এমন নতজানু চরিত্র দেশপ্রেমী জনগণ জানে। তাদের এই ন্যাক্কারজনক স্বৈরতন্ত্রের সূচনা হয়েছিল খোদ শেখ মুজিবের শাসনকাল থেকেই। এদের স্বৈরাচারী আচরণে এবং নিষ্ঠুরতায় দেশবাসী ত্যক্ত-বিরক্ত হয়ে উঠেছিল। শেখ মুজিবের দেখানো ফ্যাসিস্ট শাসন প্রক্রিয়া থেকে তার কন্যা শেখ হাসিনা কখনোই বের হতে পারেননি; বরং আরও বহু গুণ বেশি স্বৈরাচারী হয়ে উঠেছিলেন। একজন মানুষকে অমানুষ হতে হলে যতটুকু পাপ করতে হয়, শেখ হাসিনা তা সব অতিক্রম করে গিয়েছিলেন। তার পাপের বোঝা এত ভারী ছিল যে, কোনো সুস্থ মস্তিষ্কসম্পন্ন ব্যক্তি তাকে মানুষ বলে বিবেচনা না করে পশুর স্তরভুক্ত বললেও অত্যুক্তি হবে না। হাসিনার চরিত্র বাংলাদেশের ইতিহাসের গোপন বিষয় নয়; এর প্রমাণ বহু দলিল ও নথিতে রয়েছে। তার গুরুতর অপরাধের তালিকাও দীর্ঘ। তিনি বাংলাদেশের নব্য হিটলার হিসেবে পরিণত হয়েছিলেন।

১৯৮১ সালে, যখন হাসিনা আওয়ামীলীগের সভানেত্রী হন,তখন তিনি বিবিসির বিশিষ্ট সাংবাদিক সিরাজুর রহমানের সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন যে, তিনি রাজনীতিতে এসেছেন জাতির কাছ থেকে তার বাবার এবং পরিবারের হত্যার প্রতিশোধ নেয়ার জন্য। সুতরাং,হাসিনার মতো ক্ষুদ্র মনের এবং প্রতিহিংসাপরায়ণ একজন লোক ক্ষমতার গদিতে বসলে যা হওয়ার কথা, সেটাই হয়েছে। দুর্বৃত্ত হাসিনার বহুমুখী দুষ্ট চরিত্রের অন্যতম কয়েকটি বৈশিষ্ট্য হলো-প্রচণ্ড মিথ্যাচারিতা, মানুষ হত্যার নেশা,অর্থ ও ক্ষমতার প্রতি লোভ, প্রতিশোধপরায়ণতা, পরনিন্দা ও কুৎসা রটনা, অশালীন ভাষায় গালিগালাজ, প্রতারণা, আক্রোশ ইত্যাদি। তার এই ন্যক্কারজনক চরিত্রের সবকিছু প্রমাণসহ লেখা হলে, প্রতিটি বিষয় নিয়ে একটি করে বৃহৎ বই লেখা যাবে।

তবে, সংক্ষেপে বলতে গেলে বলা যায়, হাসিনার আচরণ সর্বদা অত্যন্ত বিভাজনকারী, বিতর্কিত এবং নিন্দনীয় ছিল। মিথ্যাবাদী হিসেবে তিনি অত্যন্ত পারদর্শী ছিলেন এবং মিথ্যা বলাই তার অন্যতম বড় হাতিয়ার ছিল। এছাড়া তার রক্তপিপাসু এবং হিংস্র মনোভাব সবসময়ই মানুষ খুন করার মাধ্যমে বিকৃত সন্তুষ্টি পেয়েছে। এর অসংখ্য দৃষ্টান্ত ইতিহাসে রয়েছে।

শেষ পর্যন্ত, ৫ আগস্ট ২০২৪ সালে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনের সময়, তিনি দেশ থেকে পলায়নের আগে প্রায় ১০০০ মানুষ হত্যা করেছেন, যা দেশের চিন্তাশীল মহল গণহত্যা হিসেবে অভিহিত করেছেন। তারই দলের নেতা সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত বলেছিলেন,’বাঘে ধরলে ছাড়ে, হাসিনা ধরলে ছাড়ে না।’ এতে প্রমাণ হয়, হিংস্র প্রাণী বাঘের ভিতরও দয়া থাকতে পারে, কিন্তু হাসিনা ছিলেন পশুর চেয়েও নিকৃষ্ট, যার মধ্যে মানবিক দয়া-মায়া ছিল না। হাসিনা তার সন্ত্রাসী যুবলীগ ও ছাত্রলীগকে কঠোরভাবে আদেশ দিয়েছিলেন,’একটার বদলে দশটা লাশ চাই।’ তার এই উক্তি থেকেই বোঝা যায়, তিনি হিংস্র হায়েনার মতো খুনের নেশায় কতটা উন্মাদ হয়ে উঠেছিলেন।

১৯৯৬ সালের মেয়াদে তার দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতি, লুটপাট এবং স্বৈরাচার এতটাই নিদারুণ হয়ে উঠেছিল যে, তখন জনগণের শেষ ভরসা পুলিশ, প্রশাসন, সেনাবাহিনী এবং আদালতকেও সন্ত্রাসীদের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছিল। তিনি ধ্বংসের শক্তিতে দক্ষ ছিলেন, গঠনের নয়। তখন দেশের মাননীয় আদালত হাসিনাকে ‘রং হেডেড’ ব্যক্তি হিসেবে আখ্যায়িত করেছিলেন, যা বাংলাতে-মানসিক বিকৃত, পাগল বা উন্মাদ বলে বোঝানো হয়। সে সময় বিশিষ্ট মহল থেকে তার মানসিক চিকিৎসার প্রয়োজন ছিল বলে পরামর্শ দেওয়া হয়েছিল। কেননা, মারাত্মক প্রতিহিংসা, প্রতিশোধ, গুম-খুন ইত্যাদি বাসনার প্রবৃত্তি দ্বারা হাসিনা পরিচালিত হতেন, কিন্তু সৎ বা সাধু কোনো পরামর্শেই কান দেওয়া তার চরিত্রের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ ছিল না।

হাসিনা প্রতারণায়ও ছিলেন অতুলনীয়। ১৯৯৬ সালের নির্বাচনী প্রচার অভিযানে, তিনি ওমরা পালন করে এসে সেই পোশাক পরিহিত অবস্থায় নির্বাচনী প্রচার চালিয়ে যান। জনগণের কাছে কান্নাকাটি করে আওয়ামীলীগের অতীত ভুল-ভ্রান্তির জন্য করজোড়ে ক্ষমা প্রার্থনা করেন এবং একবারের জন্য ক্ষমতায় আসার সুযোগ চান। কিন্তু নির্বাচনে জয়লাভের পর তার মাথার পট্টি এবং হাতে থাকা তসবিহ উধাও হয়ে যায়, আর জনগণকে কলার খোলসের মতো ছুঁড়ে ফেলে দেন। অন্যদিকে, এরশাদের শাসনামলে তিনি বলেছিলেন, ‘যে রাজনৈতিক দল ১৯৮৬ সালের প্রহসনমূলক নির্বাচনে অংশ নেবে, সেই দল জাতীয় বেইমান হিসেবে চিহ্নিত হবে।’ অথচ পরের দিনই তিনি নিজেই ঘোষণা দেন যে তার দল আওয়ামীলীগ নির্বাচনে অংশ নেবে। নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা যায়, এরশাদের কাছ থেকে রাতের আঁধারে বিশাল অঙ্কের টাকা নিয়ে তিনি সেই নির্বাচনে গিয়েছিলেন। এজন্যই অনেকে তাকে নির্লজ্জ মিথ্যাবাদী এবং ক্ষমতালোভী বলে আখ্যায়িত করেছেন।

হাসিনার অপরাধের তালিকা দীর্ঘ এবং তিনি আওয়ামীলীগ -বাকশালীদের দ্বারা সবসময় মিথ্যা কথা বলে তার দুষ্ট চরিত্র ঢাকার চেষ্টা করে এসেছেন। তবে মিথ্যার মুখোশ একদিন না একদিন উন্মোচিত হবেই, কারণ সত্যকে চিরকাল চেপে রাখা যায় না। বিগত ১৫ বছরে তিনি বাংলাদেশে যে বর্বোচিত অপকর্ম চালিয়েছেন, তার তালিকা অনেক লম্বা। তার সবচেয়ে জঘন্যতম ও মারাত্মক অপরাধগুলির মধ্যে রয়েছে-গণতন্ত্র হত্যা, মানবাধিকার লঙ্ঘন, খুন-গুম, ভোটাধিকার হরণ, বিচার বিভাগের স্বাধীনতা হরণ, আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় ব্যর্থতা, বাকস্বাধীনতা হরণ, লুটপাট এবং চোর-ডাকাতদের প্রতিপালন ইত্যাদি অন্যতম।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে, ৫ আগস্ট তিনি দেশ থেকে পলায়ন করেন, যা জনগণের কাছে অপ্রত্যাশিত ছিল না। এটি নিশ্চিত ছিল যে, একদিন না একদিন তার পতন হবে, কারণ ইতিহাস সাক্ষী দেয় যে স্বৈরাচারী শাসকরা কখনোই চিরস্থায়ী হয় না। ভাগ্যিস পরাজিত ফ্যাসিস্ট হাসিনা প্রাণ বাঁচিয়ে পালিয়ে গিয়েছিলেন। অন্যথায়, ছাত্র-জনতা তাকে জাহান্নামে পাঠিয়ে দিতো।

সুতরাং, যেভাবেই হোক না কেন, সর্বকালের সর্ব নিকৃষ্টতম বাঙালি শেখ হাসিনাকে বাংলাদেশের আদালতের কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়ে বিচারের মাধ্যমে সর্বোচ্চ শাস্তির বিধান নিশ্চিত করতে হবে, সেটাই দেশবাসীর প্রাণের দাবি। তিনি বিশ্বের যেখানেই থাকুন না কেন, সরকারকে তাকে দেশে ফিরিয়ে আনতে হবে।

লেখক: প্রাবন্ধিক, ইংল্যান্ড প্রবাসী