ঢাকা ১০:৫৩ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ১৬ মার্চ ২০২৫, ২ চৈত্র ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
শিরোনাম ::
জুলাই: মাতৃভূমি অথবা মৃত্যু গ্রন্থের প্রকাশনা অনুষ্ঠানে উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ প্রসঙ্গ: স্বাধীনতার ঘোষণা এবং জাতির জনক- গাজী আব্দুল কাদির মুকুল সিলেট অনলাইন প্রেসক্লাবের বার্ষিক সাধারণ সভা ও ইফতার মাহফিল সম্পন্ন এসজিএমএসসি অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশনের ইফতার ও দোয়া মাহফিল আট জন বিশিষ্ট ব্যক্তি পাচ্ছেন ২০২৫ সালের স্বাধীনতা পুরস্কার যুক্তরাজ্য প্রবাসী হযরত শাহজালাল (র) কামিল মাদ্রাসার এতিম শিক্ষার্থীদের মাঝে মোট দুই লক্ষ টাকা প্রদান হাসান ফাউন্ডেশন এর অর্থায়নে খাদ্য সামগ্রী মাদ্রাসা ও এতিমখানায় বিতরণ সিলেট কতোয়ালী থানার অভিযানে জয় বাংলা ব্রিগেড সদস্য বাবুল আহমদ গ্রেফতার ওসমানীনগরে প্রবাসী পরিবার ও পুলিশের উপর হামলার ঘটনায় ১২ জন আটক যুক্তরাজ্য প্রবাসী আরকান আহমদের পক্ষ থেকে মাদ্রাসার এতিম শিক্ষার্থীদের নগদ অর্থ প্রদান

প্রসঙ্গ: স্বাধীনতার ঘোষণা এবং জাতির জনক- গাজী আব্দুল কাদির মুকুল

গাজী আব্দুল কাদির মুকুল
  • আপডেট সময় : ০২:৩৮:২৫ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ১০ মার্চ ২০২৫ ১৫ বার পড়া হয়েছে

গাজী আব্দুল কাদির মুকুল:

একটি জনগোষ্ঠী কেন স্বাধীনতা চায়, এবং তাদের স্বাধীনতার জন্য কে প্রস্তুত করেছে—এই প্রশ্নগুলোর উত্তর জানা প্রয়োজন।

আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী স্বাধীনতার আনুষ্ঠানিক ঘোষণা কে দিয়েছেন, রণাঙ্গনে স্বাধীনতার জন্য কারা যুদ্ধ করেছেন এবং কে তাদের নেতৃত্ব দিয়েছেন—এসবই একটি স্বাধীনতা যুদ্ধের মূল অঙ্গ। এই সমস্ত তথ্যের সঠিক সমন্বয় ছাড়া স্বাধীনতার প্রকৃত ইতিহাস লেখা সম্ভব নয়। শেরে বাংলা এ কে ফজলুল হক বাংলার মুসলমানদের মধ্যে শিক্ষা ও রাজনৈতিক চেতনার প্রসারে বিশেষ অবদান রেখেছেন, যা শিক্ষিত মুসলমানদের মুখে মুখে ফিরেছে। বিগত শতাব্দীর বিশ, ত্রিশ ও চল্লিশের দশকে ফজলুল হকের অবদান ছাড়া ৭০-এর দশকের স্বাধীনতা যুদ্ধের জন্য পূর্ব বাংলার মুসলমানেরা প্রস্তুত হতে পারত না।

মাওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানী ১৯৫৫ সালের ১৭ জুন ঢাকার পল্টন ময়দানের এক জনসভায় পাকিস্তানের কেন্দ্রীয় সরকারকে সতর্ক করে বলেছিলেন যে, যদি শোষণ ও শাসনের মনোভাব ত্যাগ না করা হয়, তাহলে পূর্ব পাকিস্তান “আসসালামু আলাইকুম” বলে আলাদা হয়ে যাবে। পরবর্তী সময়ে তিনি পাকিস্তানের ষড়যন্ত্রগুলো বোঝেন এবং সর্বপ্রথম তিনি বাংলাদেশের স্বাধীনতার ডাক দেন। ১৯৭০ সালের ৪ ডিসেম্বর ঢাকার পল্টন ময়দানে অন্য এক জনসভায় দাঁড়িয়ে শেরে বাংলা ফজলুল হকের লাহোর প্রস্তাবের আলোকে “স্বাধীন সার্বভৌম পূর্ব পাকিস্তান” প্রতিষ্ঠার আহ্বান জানান৷ জননেতা মওলানা ভাসানী একদিকে আহ্বান জানিয়ে থেমে থাকেননি, বরং ১ দফা তথা স্বাধীনতা আন্দোলন শুরু করেন। তার অনুপ্রেরণায় ছাত্রসমাজও আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়ে। এরই ধারাবাহিকতায়, মুক্তিপাল ছাত্র নেতৃবৃন্দ ১৯৭১ সালের ১লা মার্চ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘স্বাধীন বাংলা ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ’ গঠন করেন। ২ মার্চ বিশ্ববিদ্যালয়ের বটতলায় অনুষ্ঠিত ছাত্র সমাবেশে তারা স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকা উত্তোলন করেন এবং একটি স্বাধীন দেশের প্রস্তাব গ্রহণ করে ইশতেহার পাঠ করেন, যেখানে বলা হয়, “আজ থেকে স্বাধীন ও সার্বভৌম বাংলাদেশ ঘোষণা করা হলো।” তাদের এই কর্মসূচিতে গোটা দেশের ছাত্র-জনতা স্বাধীনতার জন্য উন্মুখ হয়ে ওঠে।

এক পর্যায়ে, ছাত্র নেতৃবৃন্দ শেখ মুজিবুর রহমানকে স্বাধীনতা ঘোষণা দিতে চাপ দিতে থাকেন, কিন্তু শেখ মুজিব এতে রাজি হননি। স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধের বিষয়ে তার আগ্রহ ছিল না; এমনকি মুক্তিযুদ্ধের প্রসঙ্গ উঠলেই তিনি বিরক্ত হয়ে অন্য দিকে মোড় নিতেন৷ ক্ষমতার প্রতি লোভ তাঁর সহজাত। সেই সময় তিনি ইয়াহিয়া খানকে প্রকাশ্যে বলেন, “আমি যদি আপনার কথামতো কাজ করি, তাহলে ছাত্র নেতারা আমাকে গুলি করবে; আর যদি ছাত্র নেতাদের কথামতো চলি, তাহলে আপনি আমাকে গুলি করবেন। এখন আমি কী করি?” তখন ছাত্র নেতারা তীব্র চাপ দিয়ে মুজিবের কাছ থেকে স্বাধীনতার ঘোষণা চাইছিলেন। এ অবস্থায়, ছাত্রদের সন্তুষ্টির জন্য ৭ই মার্চের ভাষণের শেষের দিকে শেখ মুজিব বলেন, “এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম। জয় বাংলা, জয় পাকিস্তান।

অবশেষে, ২৫ মার্চ সন্ধ্যাবেলায় তাজউদ্দিন আহমদ মুজিবকে স্বাধীনতার আনুষ্ঠানিক ঘোষণার জন্য জোরালো অনুরোধ জানান, কিন্তু তিনি তাতে কোনোভাবেই সাড়া দেননি, উল্টো তাকে বলেন-বাড়ি গিয়ে নাকে তেল দিয়ে ঘুমিয়ে থাকো, পরশুদিন (২৭ মার্চ) হরতাল ডেকেছি।

অন্যদিকে, ২৫ মার্চের কালরাতে ইয়াহিয়া খানের সৈন্যদের আক্রমণের পূর্বসংকেত পেয়ে ছাত্র নেতৃবৃন্দসহ সবাই মুজিবকে আত্মগোপনের পরামর্শ দিলে তিনি বলেন, “তোমরা পালিয়ে যাও, আমি আমার ব্যবস্থা করে রেখেছি।” সত্যি সত্যি, মুজিব সেই রাতে পাক সেনাদের কাছে আপসে ধরা দেন এবং তার পরিবারের সদস্যদের নিরাপত্তার জন্য তাদের তত্ত্বাবধানে রেখে যান।

যুদ্ধকালীন সময়ে দীর্ঘ নয় মাস মুজিবের পরিবারকে পাকিস্তানি সরকার মাসিক ভাতা দেয়৷ এদিকে রাজনৈতিক নেতারা নিজেদের সুবিধামতো আত্মগোপন করেন, তখন পাকিস্তানিদের নারকীয় ধ্বংসযজ্ঞে জাতি দিশেহারা ও বিভ্রান্তির দোলায় দুলছিল।

এই কঠিন পরিস্থিতিতে চট্টগ্রামের কালুরঘাট বেতার কেন্দ্র থেকে ২৬ শে মার্চ একটি ঐতিহাসিক ঘোষণা আসে মেজর জিয়াউর রহমানের কন্ঠে: “আমি মেজর জিয়া বলছি, আমি বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করছি। আপনারা দুশমনদের প্রতিহত করুন; দলে দলে এসে যোগ দিন স্বাধীনতা যুদ্ধে। ইনশাআল্লাহ, বিজয় আমাদের অবধারিত।”

এটি উল্লেখযোগ্য যে, যদি শেখ মুজিব স্বাধীনতা ঘোষণা করে থাকেন, তবে কেউ কলমের খোঁচায় সেটি মুছে ফেলতে পারবে না। কিন্তু যদি তিনি স্বাধীনতা ঘোষণা না করেন, তবে কোনো ভাষণ বা বিবৃতি দিয়ে কেউ তাঁকে স্বাধীনতার ঘোষক হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে পারবে না। মুজিব স্বাধীনতা ঘোষণা করেছিলেন কি না, তা বোঝার জন্য প্রথমে জানতে হবে পাকিস্তান আমলে তাঁর রাজনৈতিক লক্ষ্য কী ছিল। তাঁর ৬ দফা আন্দোলন, ১৯৭১-এর ৭ মার্চের ভাষণ, এবং ১৬ মার্চ থেকে ২৪ মার্চ পর্যন্ত ইয়াহিয়ার সাথে বৈঠকের পর্যালোচনা করলে স্পষ্ট হয় যে, মুজিবের রাজনৈতিক লক্ষ্য স্বাধীনতা নয়, বরং পূর্ব পাকিস্তানের স্বায়ত্তশাসন এবং অখণ্ড পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী হওয়া ছিল।

এখানে একটি কথা বিশেষভাবে উল্লেখ করতে চাই যে, শেখ মুজিব স্বাধীনতা ঘোষণা না দেওয়ার ব্যাপারে বস্তুনিষ্ঠ সব লেখক, গবেষক ও বিশ্লেষক একমত যে, অখণ্ড পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী হওয়ার নেশায় বিবর ছিলেন মুজিব; তাই তিনি স্বাধীনতার ঘোষণা দেননি। তবে, কেন, কি কারণে ২৫ শে মার্চ রাতে পাক বাহিনীর হাতে স্বেচ্ছায় আত্মসমর্পণ করে পশ্চিম পাকিস্তানে চলে গেলেন, সে ব্যাপারে কোনো লেখক এর অন্তর্নিহিত কারণ বা ব্যাখ্যা দেননি। তারা শুধুমাত্র এটুকু বলেছেন যে, কেবল শেখ মুজিবই তা জানেন। কিন্তু কেন তিনি আত্মসমর্পণ করলেন, এ বিষয়ে আমার একটি ব্যক্তিগত পর্যালোচনা বা ব্যাখ্যা রয়েছে। তা হল, শেখ মুজিবুর রহমানের রাজনৈতিক চরিত্র বা আমলনামা সম্পর্কে যাদের ন্যূনতম ধারণা আছে, তারা সবাই জানেন যে, মুজিব রাজনৈতিক ময়দানে অত্যন্ত দুরন্ত, বিচক্ষণ এবং কৌশলে পটু। স্বাধীনতার প্রশ্নে তাঁর মধ্যে এক ধরনের দ্বিধা-দ্বন্দ্ব ও সংশয় কাজ করছিল, তাই তিনি এতে একটি জঘন্য কৌশল অবলম্বন করেন। যেমন, তাঁর ধারণা ছিল, বাঙালিরা যুদ্ধ করে পশ্চিম পাকিস্তান থেকে স্বাধীনতা অর্জন করতে পারবে না। সুতরাং, যুদ্ধ ব্যর্থ হলে তিনি পাকিস্তানিদের বলবেন, “আমি তো স্বাধীনতা ঘোষণা দিইনি; আমি আসলে অখণ্ড পাকিস্তান চাই।” এতে তাঁকে ছেড়ে দেওয়ার আশায় ছিলেন, এবং মুক্তিযোদ্ধাদের ভাগ্য নিয়ে তাঁর কোনো আগ্রহ ছিল না।

এছাড়া, যুদ্ধকালীন সময়ে শেখ মুজিব পাকিস্তানের কারাগারে বন্দি অবস্থায় আদালতে বারবার জবানবন্দি দিয়েছেন যে, তিনি বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করেননি; অন্যদের কর্মকাণ্ডের দায়-দায়িত্ব তাঁর নয়। অন্যদিকে, মুজিবের দ্বিতীয় চিন্তা ছিল, যদি ঘটনার পর বাঙালিরা মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে দেশ স্বাধীন করে, তাহলে তো তিনি হবেন সেই “হিরো”। এই কারণেই শেখ মুজিব স্বাধীনতা ঘোষণা দেননি। তবে এ কথা নিশ্চিত যে, মুজিবের এই ঘৃণিত দ্বৈতনীতি বা হঠকারিতা একদিন ইতিহাসের পাতায় প্রকাশ পাবে। অবশেষে দেখা গেল তার দ্বিতীয় পরিকল্পনাটি বাস্তবে রূপ নিল; মুক্তিযোদ্ধারা দেশ স্বাধীন করল, এবং মুজিব দেশে ফিরে এসে রাষ্ট্রের একচ্ছত্র মালিক হয়ে প্রায় দেবতার আসনে বসে গিয়েছিলেন।

বলাবাহুল্য, বাংলাদেশ স্বাধীনতা লাভের পর শেখ মুজিব ১৯৭২ সালের ৮ জানুয়ারি পাকিস্তান কারাগার থেকে মুক্তি পেয়ে প্রথমে লন্ডনে পৌঁছার আগ পর্যন্ত তিনি জানতেন পূর্ব পাকিস্তানকে অটোনমি বা স্বায়ত্তশাসন দেয়া হয়েছে। যাইহোক, দেশে প্রত্যাবর্তনের পরপরই মুজিব রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা গ্রহণ করেন। রাষ্ট্রক্ষমতা কুক্ষিগত করার পর থেকেই একে একে প্রকাশ পেতে থাকে মুজিবের আসল চেহারা । তিনি ছিলেন ডানপিটে, হিতাহিত জ্ঞানশূন্য, নিষ্ঠুর স্বৈরশাসক এবং দুর্নীতিবাজদের মহাগুরু। স্বাধীনতার পূর্ব ও স্বাধীনতা উত্তর শেখ মুজিব ছিলেন পৃথক সত্তা৷

পঁচাত্তরের ১৫ আগস্টের মৃত্যুর আগ পর্যন্ত যদি শেখ মুজিবের পুরো রাজনৈতিক জীবন বা চরিত্র সঠিকভাবে পুঙ্খানুপুঙ্খ বিচার-বিশ্লেষণ করা হয়, তাহলে স্পষ্টভাবে যে বিষয়গুলো তার মধ্যে খুঁজে পাওয়া যাবে, তা হল: ডিগবাজি, মিথ্যাচারিতা, স্বৈরাচারিতা, ক্ষমতার লিপ্সা, ঈর্ষা, প্রতিশোধ, প্রতিহিংসা, স্বেচ্ছাচারিতা, অহংকার এবং ষড়যন্ত্র। সর্বদা এসব মারাত্মক এবং প্রখর রোগে সংক্রামিত ছিলেন মুজিব।

অন্যদিকে, দীর্ঘকাল ধরে স্তব ও স্তুতি শুনতে শুনতে মুজিব নিজেকে স্বাধীন বাংলাদেশের সম্রাট অথবা সে জাতীয় কেউ ভাবতেনধ। রাষ্ট্রক্ষমতায় মুজিবের সাড়ে তিন বছরে যেসব খুন, গুম, দুর্নীতি, সন্ত্রাস এবং রাষ্ট্রের স্বার্থবিরোধী কার্যকলাপ ঘটেছে, সেগুলোর বৃত্তান্ত যদি ধারাবাহিকভাবে প্রকাশ করা হয়, তাহলে তা এক বিশাল মহাভারতে পরিণত হবে। অবশ্য তার সকল অপকর্মের জন্য ইতিহাস একদিন তাকে আদালতের কাঠগড়ায় দাঁড় করালে তাতে বিস্ময়ের কিছু থাকবে না।

দুঃখজনক হলেও সত্য, আওয়ামীলীগের কলম সন্ত্রাসী ও একশ্রেণীর মেরুদণ্ডহীন নেতা, নীতিহীন বুদ্ধিজীবী এবং চরিত্রহীন ব্যক্তি শেখ মুজিবের রাজনৈতিক জীবনের সঠিক তথ্য বা কলঙ্কময় অধ্যায় উদ্দেশ্যপ্রণীতভাবে হীন উদ্দেশ্যে প্রকৃত সত্য গোপন করে মনগড়া বক্তব্য সাজিয়ে মিথ্যাচারের আশ্রয় নিয়ে বিভিন্ন ইতিহাস, বই, নাটক, গান ইত্যাদি অবিরাম তৈরি করে যাচ্ছেন। কেননা, মুজিব সম্পর্কে গোটা জাতি ও নতুন প্রজন্মকে মিথ্যা ইতিহাস শিখিয়ে নিজেদের অশুভ অবিসন্ধি চরিতার্থ করাই হচ্ছে আওয়ামী লীগ এবং সগোত্রীয় কলম সন্ত্রাসীদের একমাত্র লক্ষ্য৷

আরেকটি আশ্চর্যের বিষয় হল, শেখ মুজিবুর রহমানের রাজনৈতিক জীবনের পাহাড় পরিমাণ অন্যায়, অত্যাচার, অবিচার এবং অপকর্ম সুনির্দিষ্টভাবে প্রমাণিত হওয়ার পরও গণধীকৃত আওয়ামী লীগ ও তার সমমনারা অযৌক্তিক এবং কাণ্ডজ্ঞানহীন ভাবে মুজিবকে ‘জাতির পিতা’ বলে উচ্চস্বরে জিগির তুলেন। এতে তাদের লজ্জা থাকা উচিত ছিল, কিন্তু এখানেই শেষ নয়। গত ১৫ বছর স্বৈরাচারী হাসিনা সরকার তার শাসনামলে বঙ্গবন্ধু, মুজিববাদ তথা মুজিব ‘বন্দনা’ করতে পুরো জাতিকে আইন করে বাধ্য করেছেন।

হাজার বছরের পুরনো বাঙালি জাতির ঘাড়ে শেখ মুজিবকে ‘জাতির পিতা ও হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি’ নামক ভারি পাথর চাপিয়ে দেওয়া হয়েছিল। এতে নির্দ্বিধায় বলা চলে, যতদিন বাংলাদেশে মানুষ মুজিবকে পূজার বেদীতে রাখবে ততদিন বাংলাদেশ থেকে ফ্যাসিবাদ দূর হবে না। মূলত, মানুষের প্রতি ভক্তি, শ্রদ্ধা, সম্মান, ভালোবাসা ইত্যাদি আসে তার কৃত ভালো কর্মের জন্য, কিন্তু জোর করে তা কখনো আদায় করা যায় না। অথচ ইতিহাস সাক্ষী দেয় যে ৭৫-এর ১৫ অগাস্ট, এক সফল সামরিক বিপ্লবের মাধ্যমে শেখ মুজিব সপরিবারে নিহত হওয়ার পর দেশের মানুষ মিষ্টি বিতরণ করেছে।

সর্বস্তরের জনগণ স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে রাস্তায় ব্যাপকভাবে উল্লাস প্রকাশ করেছে, দেয়ালে টাঙ্গানো মুজিবের ফ্ৰেমকৃত ছবি মাটিতে ফেলে পায়ে জুতা দিয়ে এর উপর লাফালাফি করেছে। এমন গণ প্রতিক্রিয়ার ফলে অন্ধ মুজিব প্রেমিকরাও দেশের কোথাও সামান্যতম প্রতিবাদটুকুও করেনি। তখন আওয়ামী লীগের মুজিবের অনেক ঘনিষ্ঠ নেতারা বিরূপ মন্তব্য করে বলেছেন, ‘বাংলাদেশে ফেরাউনের পতন হয়েছে’ অথবা সেই দিনকে ‘নাজাত দিবস’ হিসেবে উল্লেখ করেছেন।

বিস্ময়ের বিষয় যে, শেখ মুজিবুর রহমানের শেষ বিদায়ের সময় পুলিশের সহায়তায় স্থানীয় এক মৌলবীকে ডেকে এনে কোনোমতে ১৫-২০ জন লোককে জানাযার জন্য জড়ো করে, নীরবে নিঃশব্দে দাফন কার্য শেষ করা হয়। আরো উল্লেখ্য যে, ২০২৪ সালের পাঁচ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে স্বৈরাচারী হাসিনা সরকারের পতনের পর সারা দেশজুড়ে জনগণ মুজিবের সকল ভাস্কর্য জুতাপেটার মাধ্যমে ভেঙে চুরমার করে দিয়েছে; এমনকি তার ধানমন্ডির বাড়িতে আগুন লাগিয়ে পুড়িয়ে দিয়েছে।

যাইহোক, সঠিক ইতিহাস অনুসন্ধান করলে পাওয়া যায় যে ১৩৫২ সালের দিকে ঐক্যবদ্ধ একটি স্বতন্ত্র বাঙালি জাতি গঠনের লক্ষ্যে সুলতান শামসুদ্দিন ইলিয়াস শাহ বাংলা ভাষাভাষীদের সমন্বয়ে গৌড় ও বঙ্গ রাজ্য একত্রিত করে অখন্ড স্বাধীন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করেন। তার রাজত্বকালেই বাঙালিরা একটি জাতি হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেন। তিনি তখন বাংলা ভাষাকে রাজ্যের রাষ্ট্রভাষা করেন এবং সর্বপ্রথম বাঙালিদের বাংলা ভাষায় সাহিত্য চর্চায় উৎসাহিত করেন। সেই সময় থেকেই বাঙালি জাতি এবং বাংলা ভাষা বিকশিত হতে শুরু করে, যার কারণে তার উপাধি ছিল “শাহ ই বাঙ্গালা”।

সুতরাং, বাঙালি জাতি ও জাতীয়তাবাদের স্রষ্টা বা পিতা হিসেবে ঐতিহাসিকভাবে যদি কাউকে উল্লেখ করতে হয়, তবে তিনি অবশ্যই সুলতান শামসুদ্দিন ইলিয়াস শাহ পৃথিবীর কিছু দেশে জাতির পিতা আছেন, তবে তাদের কারোরই জীবদ্দশায় কোনো ফ্যাসিবাদের গন্ধ ছিল না; বরং তারা দেশ গঠন এবং জাতি বিনির্মাণে অসাধারণ ভূমিকা রেখে ইতিহাসে অভিসংবাদিত নেতা হিসেবে জাজ্বল্যমান হয়ে আছেন। ঐতিহাসিকভাবে, একজন ফ্যাসিবাদের আইকন কোনো জাতির পিতা হওয়ার যোগ্যতা রাখে না। এটি প্রমাণিত সত্য যে শেখ মুজিবুর রহমান বাংলাদেশের স্বাধীনতা চাননি, স্বাধীনতা ঘোষণা দেননি, মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্ব দেননি, বা রণাঙ্গনে যুদ্ধ ও করেননি। উপরন্তু, দেশ স্বাধীন হওয়ার পর পাকিস্তান থেকে উড়ে এসে রাষ্ট্র ক্ষমতায় জুড়ে বসে গণতন্ত্রকে হত্যা করে বাকশাল কায়েমের মাধ্যমে দেশের জনগণ এবং লক্ষ শহীদের রক্তের সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করেছেন। তাই মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে অর্জিত একটি জাতির স্বাধীন দেশে ‘জাতির পিতা’ হতে হলে যে যোগ্যতা প্রয়োজন বা এমন একটি মাপকাঠিতে উত্তীর্ণ হতে হয়, শেখ মুজিবুর রহমান তার ধারে কাছেও নেই। বরং সুস্পষ্টভাবে প্রমাণিত যে, তার সকল ভূমিকাটি ছিল সম্পূর্ণ বিপরীত ধারায়, যার জন্য মুজিবের প্রতি জাতির মনে সর্বদা তীব্র ঘৃণা, ক্ষোভ, রোষ ও বিতৃষ্ণা বিরাজমান। উল্লেখ করা প্রয়োজন যে, শেখ মুজিব ও তার কন্যা শেখ হাসিনার শাসনামলে ‘ধানমন্ডির ৩২ নম্বর বাড়িটি’ আঁতুড়ঘরের মতো ব্যবহার করা হতো, যা আওয়ামী লীগের ‘তীর্থস্থান’ হিসেবেও পরিচিত ছিল। সেই বাড়ি থেকে পরিচালিত জঘন্যতম স্বৈরশাসনে জাতি এতটাই অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছিল যে, শেখ মুজিবের মৃত্যুর প্রায় ৫০ বছর পর, ২০২৫ সালের ৫ ফেব্রুয়ারি, বিক্ষুব্ধ ছাত্র-জনতা লংমার্চ করে সেখানে গিয়ে এক্সকাভেটর, ক্রেন ও বুলডোজার দিয়ে বাড়িটি গুঁড়িয়ে দেয়। অল্প সময়ের মধ্যেই ধানমন্ডির ৩২ নম্বর বাড়িটি ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয় এবং দ্রোহের আগুনে পুড়ে ছারখার হয়ে যায়। এতে সহজেই প্রতীয়মান হয় যে, শেখ মুজিবের প্রতি জাতির ক্ষোভ ও ঘৃণার বহিঃপ্রকাশ ঘটেছিল।

এই যখন বাস্তব অবস্থা, তখন খুবই আশ্চর্য লাগে যে আওয়ামী লীগ ও কিছু জ্ঞানপাপীরা কিভাবে শেখ মুজিবুর রহমানকে ‘জাতির পিতা’ বলে দাবি করে। সচেতন জাতি হিসেবে এটি কোন ক্রমেই কারো বোধগম্য নয়। এত কিছুর পরও ভাবতে অবাক লাগে, আওয়ামীপন্থিরা তো বটেই, আরো কিছু মহল কোন বিবেকের কারণে শেখ মুজিবুর রহমানকে বঙ্গবন্ধু, বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠাতা বা স্থপতি ইত্যাদি বলে সম্বোধন করেন। তবে আসল বিষয়টি অন্যখানে ৷ তা হল, প্রমাণের অভাবেই মানুষ সত্যকে গ্রহণ করে না তা নয়; অধিকাংশ ক্ষেত্রে দেখা যায়, প্রমাণ পেলেও তারা আরও জেদ করে সত্যকে অস্বীকার করে। সুতরাং, নিঃসন্দেহে বলা যায় যে চিরন্তন সত্য এই নীতিকতার জালে আটকা পড়ে, জেদের বশবর্তী হয়ে জনবিচ্ছিন্ন, নীতিহীন আওয়ামী লীগ ও তার বলয়ের কিছু জ্ঞানপাপী নির্লজ্জ গলাবাজি করে শেখ মুজিবুর রহমানকে ক্রমাগত ‘জাতির পিতা’ হিসেবে প্রচার করে যাচ্ছেন, যা দেশের সচেতন জনগণের দ্বারা সর্বদা প্রত্যাখ্যাত।

পরিশেষে, জাতির পিতা বিষয়ে আমার ব্যক্তিগত একটি মতামত ব্যক্ত করে লেখার ইতি টানতে চাই। ইসলামের দৃষ্টিতে, মুসলমান জাতির পিতা একমাত্র হযরত ইব্রাহিম (আ:); এর বাইরে আর কোনো ধরনের জাতির পিতা বা মাতা বলে কিছুই নেই। সুতরাং, যেহেতু বাংলাদেশ একটি মুসলিম প্রধান দেশ, তাই এ দেশে জাতীয়তা, ভাষা বা ভৌগোলিক বিবেচনায় কোনো জাতির পিতা থাকা উচিত নয়৷

লেখক: প্রাবন্ধিক, যুক্তরাজ্য প্রবাসী

নিউজটি শেয়ার করুন

আপলোডকারীর তথ্য
ট্যাগস :

প্রসঙ্গ: স্বাধীনতার ঘোষণা এবং জাতির জনক- গাজী আব্দুল কাদির মুকুল

আপডেট সময় : ০২:৩৮:২৫ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ১০ মার্চ ২০২৫

গাজী আব্দুল কাদির মুকুল:

একটি জনগোষ্ঠী কেন স্বাধীনতা চায়, এবং তাদের স্বাধীনতার জন্য কে প্রস্তুত করেছে—এই প্রশ্নগুলোর উত্তর জানা প্রয়োজন।

আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী স্বাধীনতার আনুষ্ঠানিক ঘোষণা কে দিয়েছেন, রণাঙ্গনে স্বাধীনতার জন্য কারা যুদ্ধ করেছেন এবং কে তাদের নেতৃত্ব দিয়েছেন—এসবই একটি স্বাধীনতা যুদ্ধের মূল অঙ্গ। এই সমস্ত তথ্যের সঠিক সমন্বয় ছাড়া স্বাধীনতার প্রকৃত ইতিহাস লেখা সম্ভব নয়। শেরে বাংলা এ কে ফজলুল হক বাংলার মুসলমানদের মধ্যে শিক্ষা ও রাজনৈতিক চেতনার প্রসারে বিশেষ অবদান রেখেছেন, যা শিক্ষিত মুসলমানদের মুখে মুখে ফিরেছে। বিগত শতাব্দীর বিশ, ত্রিশ ও চল্লিশের দশকে ফজলুল হকের অবদান ছাড়া ৭০-এর দশকের স্বাধীনতা যুদ্ধের জন্য পূর্ব বাংলার মুসলমানেরা প্রস্তুত হতে পারত না।

মাওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানী ১৯৫৫ সালের ১৭ জুন ঢাকার পল্টন ময়দানের এক জনসভায় পাকিস্তানের কেন্দ্রীয় সরকারকে সতর্ক করে বলেছিলেন যে, যদি শোষণ ও শাসনের মনোভাব ত্যাগ না করা হয়, তাহলে পূর্ব পাকিস্তান “আসসালামু আলাইকুম” বলে আলাদা হয়ে যাবে। পরবর্তী সময়ে তিনি পাকিস্তানের ষড়যন্ত্রগুলো বোঝেন এবং সর্বপ্রথম তিনি বাংলাদেশের স্বাধীনতার ডাক দেন। ১৯৭০ সালের ৪ ডিসেম্বর ঢাকার পল্টন ময়দানে অন্য এক জনসভায় দাঁড়িয়ে শেরে বাংলা ফজলুল হকের লাহোর প্রস্তাবের আলোকে “স্বাধীন সার্বভৌম পূর্ব পাকিস্তান” প্রতিষ্ঠার আহ্বান জানান৷ জননেতা মওলানা ভাসানী একদিকে আহ্বান জানিয়ে থেমে থাকেননি, বরং ১ দফা তথা স্বাধীনতা আন্দোলন শুরু করেন। তার অনুপ্রেরণায় ছাত্রসমাজও আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়ে। এরই ধারাবাহিকতায়, মুক্তিপাল ছাত্র নেতৃবৃন্দ ১৯৭১ সালের ১লা মার্চ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘স্বাধীন বাংলা ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ’ গঠন করেন। ২ মার্চ বিশ্ববিদ্যালয়ের বটতলায় অনুষ্ঠিত ছাত্র সমাবেশে তারা স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকা উত্তোলন করেন এবং একটি স্বাধীন দেশের প্রস্তাব গ্রহণ করে ইশতেহার পাঠ করেন, যেখানে বলা হয়, “আজ থেকে স্বাধীন ও সার্বভৌম বাংলাদেশ ঘোষণা করা হলো।” তাদের এই কর্মসূচিতে গোটা দেশের ছাত্র-জনতা স্বাধীনতার জন্য উন্মুখ হয়ে ওঠে।

এক পর্যায়ে, ছাত্র নেতৃবৃন্দ শেখ মুজিবুর রহমানকে স্বাধীনতা ঘোষণা দিতে চাপ দিতে থাকেন, কিন্তু শেখ মুজিব এতে রাজি হননি। স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধের বিষয়ে তার আগ্রহ ছিল না; এমনকি মুক্তিযুদ্ধের প্রসঙ্গ উঠলেই তিনি বিরক্ত হয়ে অন্য দিকে মোড় নিতেন৷ ক্ষমতার প্রতি লোভ তাঁর সহজাত। সেই সময় তিনি ইয়াহিয়া খানকে প্রকাশ্যে বলেন, “আমি যদি আপনার কথামতো কাজ করি, তাহলে ছাত্র নেতারা আমাকে গুলি করবে; আর যদি ছাত্র নেতাদের কথামতো চলি, তাহলে আপনি আমাকে গুলি করবেন। এখন আমি কী করি?” তখন ছাত্র নেতারা তীব্র চাপ দিয়ে মুজিবের কাছ থেকে স্বাধীনতার ঘোষণা চাইছিলেন। এ অবস্থায়, ছাত্রদের সন্তুষ্টির জন্য ৭ই মার্চের ভাষণের শেষের দিকে শেখ মুজিব বলেন, “এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম। জয় বাংলা, জয় পাকিস্তান।

অবশেষে, ২৫ মার্চ সন্ধ্যাবেলায় তাজউদ্দিন আহমদ মুজিবকে স্বাধীনতার আনুষ্ঠানিক ঘোষণার জন্য জোরালো অনুরোধ জানান, কিন্তু তিনি তাতে কোনোভাবেই সাড়া দেননি, উল্টো তাকে বলেন-বাড়ি গিয়ে নাকে তেল দিয়ে ঘুমিয়ে থাকো, পরশুদিন (২৭ মার্চ) হরতাল ডেকেছি।

অন্যদিকে, ২৫ মার্চের কালরাতে ইয়াহিয়া খানের সৈন্যদের আক্রমণের পূর্বসংকেত পেয়ে ছাত্র নেতৃবৃন্দসহ সবাই মুজিবকে আত্মগোপনের পরামর্শ দিলে তিনি বলেন, “তোমরা পালিয়ে যাও, আমি আমার ব্যবস্থা করে রেখেছি।” সত্যি সত্যি, মুজিব সেই রাতে পাক সেনাদের কাছে আপসে ধরা দেন এবং তার পরিবারের সদস্যদের নিরাপত্তার জন্য তাদের তত্ত্বাবধানে রেখে যান।

যুদ্ধকালীন সময়ে দীর্ঘ নয় মাস মুজিবের পরিবারকে পাকিস্তানি সরকার মাসিক ভাতা দেয়৷ এদিকে রাজনৈতিক নেতারা নিজেদের সুবিধামতো আত্মগোপন করেন, তখন পাকিস্তানিদের নারকীয় ধ্বংসযজ্ঞে জাতি দিশেহারা ও বিভ্রান্তির দোলায় দুলছিল।

এই কঠিন পরিস্থিতিতে চট্টগ্রামের কালুরঘাট বেতার কেন্দ্র থেকে ২৬ শে মার্চ একটি ঐতিহাসিক ঘোষণা আসে মেজর জিয়াউর রহমানের কন্ঠে: “আমি মেজর জিয়া বলছি, আমি বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করছি। আপনারা দুশমনদের প্রতিহত করুন; দলে দলে এসে যোগ দিন স্বাধীনতা যুদ্ধে। ইনশাআল্লাহ, বিজয় আমাদের অবধারিত।”

এটি উল্লেখযোগ্য যে, যদি শেখ মুজিব স্বাধীনতা ঘোষণা করে থাকেন, তবে কেউ কলমের খোঁচায় সেটি মুছে ফেলতে পারবে না। কিন্তু যদি তিনি স্বাধীনতা ঘোষণা না করেন, তবে কোনো ভাষণ বা বিবৃতি দিয়ে কেউ তাঁকে স্বাধীনতার ঘোষক হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে পারবে না। মুজিব স্বাধীনতা ঘোষণা করেছিলেন কি না, তা বোঝার জন্য প্রথমে জানতে হবে পাকিস্তান আমলে তাঁর রাজনৈতিক লক্ষ্য কী ছিল। তাঁর ৬ দফা আন্দোলন, ১৯৭১-এর ৭ মার্চের ভাষণ, এবং ১৬ মার্চ থেকে ২৪ মার্চ পর্যন্ত ইয়াহিয়ার সাথে বৈঠকের পর্যালোচনা করলে স্পষ্ট হয় যে, মুজিবের রাজনৈতিক লক্ষ্য স্বাধীনতা নয়, বরং পূর্ব পাকিস্তানের স্বায়ত্তশাসন এবং অখণ্ড পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী হওয়া ছিল।

এখানে একটি কথা বিশেষভাবে উল্লেখ করতে চাই যে, শেখ মুজিব স্বাধীনতা ঘোষণা না দেওয়ার ব্যাপারে বস্তুনিষ্ঠ সব লেখক, গবেষক ও বিশ্লেষক একমত যে, অখণ্ড পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী হওয়ার নেশায় বিবর ছিলেন মুজিব; তাই তিনি স্বাধীনতার ঘোষণা দেননি। তবে, কেন, কি কারণে ২৫ শে মার্চ রাতে পাক বাহিনীর হাতে স্বেচ্ছায় আত্মসমর্পণ করে পশ্চিম পাকিস্তানে চলে গেলেন, সে ব্যাপারে কোনো লেখক এর অন্তর্নিহিত কারণ বা ব্যাখ্যা দেননি। তারা শুধুমাত্র এটুকু বলেছেন যে, কেবল শেখ মুজিবই তা জানেন। কিন্তু কেন তিনি আত্মসমর্পণ করলেন, এ বিষয়ে আমার একটি ব্যক্তিগত পর্যালোচনা বা ব্যাখ্যা রয়েছে। তা হল, শেখ মুজিবুর রহমানের রাজনৈতিক চরিত্র বা আমলনামা সম্পর্কে যাদের ন্যূনতম ধারণা আছে, তারা সবাই জানেন যে, মুজিব রাজনৈতিক ময়দানে অত্যন্ত দুরন্ত, বিচক্ষণ এবং কৌশলে পটু। স্বাধীনতার প্রশ্নে তাঁর মধ্যে এক ধরনের দ্বিধা-দ্বন্দ্ব ও সংশয় কাজ করছিল, তাই তিনি এতে একটি জঘন্য কৌশল অবলম্বন করেন। যেমন, তাঁর ধারণা ছিল, বাঙালিরা যুদ্ধ করে পশ্চিম পাকিস্তান থেকে স্বাধীনতা অর্জন করতে পারবে না। সুতরাং, যুদ্ধ ব্যর্থ হলে তিনি পাকিস্তানিদের বলবেন, “আমি তো স্বাধীনতা ঘোষণা দিইনি; আমি আসলে অখণ্ড পাকিস্তান চাই।” এতে তাঁকে ছেড়ে দেওয়ার আশায় ছিলেন, এবং মুক্তিযোদ্ধাদের ভাগ্য নিয়ে তাঁর কোনো আগ্রহ ছিল না।

এছাড়া, যুদ্ধকালীন সময়ে শেখ মুজিব পাকিস্তানের কারাগারে বন্দি অবস্থায় আদালতে বারবার জবানবন্দি দিয়েছেন যে, তিনি বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করেননি; অন্যদের কর্মকাণ্ডের দায়-দায়িত্ব তাঁর নয়। অন্যদিকে, মুজিবের দ্বিতীয় চিন্তা ছিল, যদি ঘটনার পর বাঙালিরা মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে দেশ স্বাধীন করে, তাহলে তো তিনি হবেন সেই “হিরো”। এই কারণেই শেখ মুজিব স্বাধীনতা ঘোষণা দেননি। তবে এ কথা নিশ্চিত যে, মুজিবের এই ঘৃণিত দ্বৈতনীতি বা হঠকারিতা একদিন ইতিহাসের পাতায় প্রকাশ পাবে। অবশেষে দেখা গেল তার দ্বিতীয় পরিকল্পনাটি বাস্তবে রূপ নিল; মুক্তিযোদ্ধারা দেশ স্বাধীন করল, এবং মুজিব দেশে ফিরে এসে রাষ্ট্রের একচ্ছত্র মালিক হয়ে প্রায় দেবতার আসনে বসে গিয়েছিলেন।

বলাবাহুল্য, বাংলাদেশ স্বাধীনতা লাভের পর শেখ মুজিব ১৯৭২ সালের ৮ জানুয়ারি পাকিস্তান কারাগার থেকে মুক্তি পেয়ে প্রথমে লন্ডনে পৌঁছার আগ পর্যন্ত তিনি জানতেন পূর্ব পাকিস্তানকে অটোনমি বা স্বায়ত্তশাসন দেয়া হয়েছে। যাইহোক, দেশে প্রত্যাবর্তনের পরপরই মুজিব রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা গ্রহণ করেন। রাষ্ট্রক্ষমতা কুক্ষিগত করার পর থেকেই একে একে প্রকাশ পেতে থাকে মুজিবের আসল চেহারা । তিনি ছিলেন ডানপিটে, হিতাহিত জ্ঞানশূন্য, নিষ্ঠুর স্বৈরশাসক এবং দুর্নীতিবাজদের মহাগুরু। স্বাধীনতার পূর্ব ও স্বাধীনতা উত্তর শেখ মুজিব ছিলেন পৃথক সত্তা৷

পঁচাত্তরের ১৫ আগস্টের মৃত্যুর আগ পর্যন্ত যদি শেখ মুজিবের পুরো রাজনৈতিক জীবন বা চরিত্র সঠিকভাবে পুঙ্খানুপুঙ্খ বিচার-বিশ্লেষণ করা হয়, তাহলে স্পষ্টভাবে যে বিষয়গুলো তার মধ্যে খুঁজে পাওয়া যাবে, তা হল: ডিগবাজি, মিথ্যাচারিতা, স্বৈরাচারিতা, ক্ষমতার লিপ্সা, ঈর্ষা, প্রতিশোধ, প্রতিহিংসা, স্বেচ্ছাচারিতা, অহংকার এবং ষড়যন্ত্র। সর্বদা এসব মারাত্মক এবং প্রখর রোগে সংক্রামিত ছিলেন মুজিব।

অন্যদিকে, দীর্ঘকাল ধরে স্তব ও স্তুতি শুনতে শুনতে মুজিব নিজেকে স্বাধীন বাংলাদেশের সম্রাট অথবা সে জাতীয় কেউ ভাবতেনধ। রাষ্ট্রক্ষমতায় মুজিবের সাড়ে তিন বছরে যেসব খুন, গুম, দুর্নীতি, সন্ত্রাস এবং রাষ্ট্রের স্বার্থবিরোধী কার্যকলাপ ঘটেছে, সেগুলোর বৃত্তান্ত যদি ধারাবাহিকভাবে প্রকাশ করা হয়, তাহলে তা এক বিশাল মহাভারতে পরিণত হবে। অবশ্য তার সকল অপকর্মের জন্য ইতিহাস একদিন তাকে আদালতের কাঠগড়ায় দাঁড় করালে তাতে বিস্ময়ের কিছু থাকবে না।

দুঃখজনক হলেও সত্য, আওয়ামীলীগের কলম সন্ত্রাসী ও একশ্রেণীর মেরুদণ্ডহীন নেতা, নীতিহীন বুদ্ধিজীবী এবং চরিত্রহীন ব্যক্তি শেখ মুজিবের রাজনৈতিক জীবনের সঠিক তথ্য বা কলঙ্কময় অধ্যায় উদ্দেশ্যপ্রণীতভাবে হীন উদ্দেশ্যে প্রকৃত সত্য গোপন করে মনগড়া বক্তব্য সাজিয়ে মিথ্যাচারের আশ্রয় নিয়ে বিভিন্ন ইতিহাস, বই, নাটক, গান ইত্যাদি অবিরাম তৈরি করে যাচ্ছেন। কেননা, মুজিব সম্পর্কে গোটা জাতি ও নতুন প্রজন্মকে মিথ্যা ইতিহাস শিখিয়ে নিজেদের অশুভ অবিসন্ধি চরিতার্থ করাই হচ্ছে আওয়ামী লীগ এবং সগোত্রীয় কলম সন্ত্রাসীদের একমাত্র লক্ষ্য৷

আরেকটি আশ্চর্যের বিষয় হল, শেখ মুজিবুর রহমানের রাজনৈতিক জীবনের পাহাড় পরিমাণ অন্যায়, অত্যাচার, অবিচার এবং অপকর্ম সুনির্দিষ্টভাবে প্রমাণিত হওয়ার পরও গণধীকৃত আওয়ামী লীগ ও তার সমমনারা অযৌক্তিক এবং কাণ্ডজ্ঞানহীন ভাবে মুজিবকে ‘জাতির পিতা’ বলে উচ্চস্বরে জিগির তুলেন। এতে তাদের লজ্জা থাকা উচিত ছিল, কিন্তু এখানেই শেষ নয়। গত ১৫ বছর স্বৈরাচারী হাসিনা সরকার তার শাসনামলে বঙ্গবন্ধু, মুজিববাদ তথা মুজিব ‘বন্দনা’ করতে পুরো জাতিকে আইন করে বাধ্য করেছেন।

হাজার বছরের পুরনো বাঙালি জাতির ঘাড়ে শেখ মুজিবকে ‘জাতির পিতা ও হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি’ নামক ভারি পাথর চাপিয়ে দেওয়া হয়েছিল। এতে নির্দ্বিধায় বলা চলে, যতদিন বাংলাদেশে মানুষ মুজিবকে পূজার বেদীতে রাখবে ততদিন বাংলাদেশ থেকে ফ্যাসিবাদ দূর হবে না। মূলত, মানুষের প্রতি ভক্তি, শ্রদ্ধা, সম্মান, ভালোবাসা ইত্যাদি আসে তার কৃত ভালো কর্মের জন্য, কিন্তু জোর করে তা কখনো আদায় করা যায় না। অথচ ইতিহাস সাক্ষী দেয় যে ৭৫-এর ১৫ অগাস্ট, এক সফল সামরিক বিপ্লবের মাধ্যমে শেখ মুজিব সপরিবারে নিহত হওয়ার পর দেশের মানুষ মিষ্টি বিতরণ করেছে।

সর্বস্তরের জনগণ স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে রাস্তায় ব্যাপকভাবে উল্লাস প্রকাশ করেছে, দেয়ালে টাঙ্গানো মুজিবের ফ্ৰেমকৃত ছবি মাটিতে ফেলে পায়ে জুতা দিয়ে এর উপর লাফালাফি করেছে। এমন গণ প্রতিক্রিয়ার ফলে অন্ধ মুজিব প্রেমিকরাও দেশের কোথাও সামান্যতম প্রতিবাদটুকুও করেনি। তখন আওয়ামী লীগের মুজিবের অনেক ঘনিষ্ঠ নেতারা বিরূপ মন্তব্য করে বলেছেন, ‘বাংলাদেশে ফেরাউনের পতন হয়েছে’ অথবা সেই দিনকে ‘নাজাত দিবস’ হিসেবে উল্লেখ করেছেন।

বিস্ময়ের বিষয় যে, শেখ মুজিবুর রহমানের শেষ বিদায়ের সময় পুলিশের সহায়তায় স্থানীয় এক মৌলবীকে ডেকে এনে কোনোমতে ১৫-২০ জন লোককে জানাযার জন্য জড়ো করে, নীরবে নিঃশব্দে দাফন কার্য শেষ করা হয়। আরো উল্লেখ্য যে, ২০২৪ সালের পাঁচ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে স্বৈরাচারী হাসিনা সরকারের পতনের পর সারা দেশজুড়ে জনগণ মুজিবের সকল ভাস্কর্য জুতাপেটার মাধ্যমে ভেঙে চুরমার করে দিয়েছে; এমনকি তার ধানমন্ডির বাড়িতে আগুন লাগিয়ে পুড়িয়ে দিয়েছে।

যাইহোক, সঠিক ইতিহাস অনুসন্ধান করলে পাওয়া যায় যে ১৩৫২ সালের দিকে ঐক্যবদ্ধ একটি স্বতন্ত্র বাঙালি জাতি গঠনের লক্ষ্যে সুলতান শামসুদ্দিন ইলিয়াস শাহ বাংলা ভাষাভাষীদের সমন্বয়ে গৌড় ও বঙ্গ রাজ্য একত্রিত করে অখন্ড স্বাধীন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করেন। তার রাজত্বকালেই বাঙালিরা একটি জাতি হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেন। তিনি তখন বাংলা ভাষাকে রাজ্যের রাষ্ট্রভাষা করেন এবং সর্বপ্রথম বাঙালিদের বাংলা ভাষায় সাহিত্য চর্চায় উৎসাহিত করেন। সেই সময় থেকেই বাঙালি জাতি এবং বাংলা ভাষা বিকশিত হতে শুরু করে, যার কারণে তার উপাধি ছিল “শাহ ই বাঙ্গালা”।

সুতরাং, বাঙালি জাতি ও জাতীয়তাবাদের স্রষ্টা বা পিতা হিসেবে ঐতিহাসিকভাবে যদি কাউকে উল্লেখ করতে হয়, তবে তিনি অবশ্যই সুলতান শামসুদ্দিন ইলিয়াস শাহ পৃথিবীর কিছু দেশে জাতির পিতা আছেন, তবে তাদের কারোরই জীবদ্দশায় কোনো ফ্যাসিবাদের গন্ধ ছিল না; বরং তারা দেশ গঠন এবং জাতি বিনির্মাণে অসাধারণ ভূমিকা রেখে ইতিহাসে অভিসংবাদিত নেতা হিসেবে জাজ্বল্যমান হয়ে আছেন। ঐতিহাসিকভাবে, একজন ফ্যাসিবাদের আইকন কোনো জাতির পিতা হওয়ার যোগ্যতা রাখে না। এটি প্রমাণিত সত্য যে শেখ মুজিবুর রহমান বাংলাদেশের স্বাধীনতা চাননি, স্বাধীনতা ঘোষণা দেননি, মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্ব দেননি, বা রণাঙ্গনে যুদ্ধ ও করেননি। উপরন্তু, দেশ স্বাধীন হওয়ার পর পাকিস্তান থেকে উড়ে এসে রাষ্ট্র ক্ষমতায় জুড়ে বসে গণতন্ত্রকে হত্যা করে বাকশাল কায়েমের মাধ্যমে দেশের জনগণ এবং লক্ষ শহীদের রক্তের সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করেছেন। তাই মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে অর্জিত একটি জাতির স্বাধীন দেশে ‘জাতির পিতা’ হতে হলে যে যোগ্যতা প্রয়োজন বা এমন একটি মাপকাঠিতে উত্তীর্ণ হতে হয়, শেখ মুজিবুর রহমান তার ধারে কাছেও নেই। বরং সুস্পষ্টভাবে প্রমাণিত যে, তার সকল ভূমিকাটি ছিল সম্পূর্ণ বিপরীত ধারায়, যার জন্য মুজিবের প্রতি জাতির মনে সর্বদা তীব্র ঘৃণা, ক্ষোভ, রোষ ও বিতৃষ্ণা বিরাজমান। উল্লেখ করা প্রয়োজন যে, শেখ মুজিব ও তার কন্যা শেখ হাসিনার শাসনামলে ‘ধানমন্ডির ৩২ নম্বর বাড়িটি’ আঁতুড়ঘরের মতো ব্যবহার করা হতো, যা আওয়ামী লীগের ‘তীর্থস্থান’ হিসেবেও পরিচিত ছিল। সেই বাড়ি থেকে পরিচালিত জঘন্যতম স্বৈরশাসনে জাতি এতটাই অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছিল যে, শেখ মুজিবের মৃত্যুর প্রায় ৫০ বছর পর, ২০২৫ সালের ৫ ফেব্রুয়ারি, বিক্ষুব্ধ ছাত্র-জনতা লংমার্চ করে সেখানে গিয়ে এক্সকাভেটর, ক্রেন ও বুলডোজার দিয়ে বাড়িটি গুঁড়িয়ে দেয়। অল্প সময়ের মধ্যেই ধানমন্ডির ৩২ নম্বর বাড়িটি ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয় এবং দ্রোহের আগুনে পুড়ে ছারখার হয়ে যায়। এতে সহজেই প্রতীয়মান হয় যে, শেখ মুজিবের প্রতি জাতির ক্ষোভ ও ঘৃণার বহিঃপ্রকাশ ঘটেছিল।

এই যখন বাস্তব অবস্থা, তখন খুবই আশ্চর্য লাগে যে আওয়ামী লীগ ও কিছু জ্ঞানপাপীরা কিভাবে শেখ মুজিবুর রহমানকে ‘জাতির পিতা’ বলে দাবি করে। সচেতন জাতি হিসেবে এটি কোন ক্রমেই কারো বোধগম্য নয়। এত কিছুর পরও ভাবতে অবাক লাগে, আওয়ামীপন্থিরা তো বটেই, আরো কিছু মহল কোন বিবেকের কারণে শেখ মুজিবুর রহমানকে বঙ্গবন্ধু, বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠাতা বা স্থপতি ইত্যাদি বলে সম্বোধন করেন। তবে আসল বিষয়টি অন্যখানে ৷ তা হল, প্রমাণের অভাবেই মানুষ সত্যকে গ্রহণ করে না তা নয়; অধিকাংশ ক্ষেত্রে দেখা যায়, প্রমাণ পেলেও তারা আরও জেদ করে সত্যকে অস্বীকার করে। সুতরাং, নিঃসন্দেহে বলা যায় যে চিরন্তন সত্য এই নীতিকতার জালে আটকা পড়ে, জেদের বশবর্তী হয়ে জনবিচ্ছিন্ন, নীতিহীন আওয়ামী লীগ ও তার বলয়ের কিছু জ্ঞানপাপী নির্লজ্জ গলাবাজি করে শেখ মুজিবুর রহমানকে ক্রমাগত ‘জাতির পিতা’ হিসেবে প্রচার করে যাচ্ছেন, যা দেশের সচেতন জনগণের দ্বারা সর্বদা প্রত্যাখ্যাত।

পরিশেষে, জাতির পিতা বিষয়ে আমার ব্যক্তিগত একটি মতামত ব্যক্ত করে লেখার ইতি টানতে চাই। ইসলামের দৃষ্টিতে, মুসলমান জাতির পিতা একমাত্র হযরত ইব্রাহিম (আ:); এর বাইরে আর কোনো ধরনের জাতির পিতা বা মাতা বলে কিছুই নেই। সুতরাং, যেহেতু বাংলাদেশ একটি মুসলিম প্রধান দেশ, তাই এ দেশে জাতীয়তা, ভাষা বা ভৌগোলিক বিবেচনায় কোনো জাতির পিতা থাকা উচিত নয়৷

লেখক: প্রাবন্ধিক, যুক্তরাজ্য প্রবাসী