আওয়ামীলীগের ডিএনএ-তে গণতন্ত্র নাই – সালাউদ্দিন আহমদ

- আপডেট সময় : ১২:৫১:০৯ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ২০ মে ২০২৫ ৯১ বার পড়া হয়েছে
জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাউদ্দিন আহমদ বলেছেন, যাদের রক্তে গণতন্ত্র নেই, যারা এই দেশে ফ্যাসিবাদকে লালন করেছে তারা জাতীয়তাবাদী দলের সদস্য হতে পারবে না।
সোমবার বিকেলে সিলেট নগরের জেলা শিল্পকলা একাডেমিতে সিলেট বিভাগে বিএনপির নতুন সদস্য সংগ্রহ ও নবায়ন কর্মসূচি উদ্বোধন অনুষ্ঠানে এই কথা বলেন।
জাতীয় নির্বাহী কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক (সিলেট) জি কে গউছের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বক্তৃতাকালে বিএনপির সিনিয়র নেতা বলেন, বাংলাদেশে অফিসিয়ালি ১৮ কোটি জনগণ বলা হয়ে থাকে। প্রকৃতপক্ষে ১৯ কোটি ছাড়িয়ে গেছে। দেশের সবচেয়ে বড় রাজনৈতিক দল বিএনপির কি এতো আকাল পড়েছে যে- আওয়ামী লীগ থেকে সদস্য আমদানি করতে হবে?
আওয়ামী লীগের ডিএনএ-তে গণতন্ত্র নাই উল্লেখ করে সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, এই দলটি জন্মলগ্ন থেকে গণতন্ত্রে বিশ্বাস করে না। সাংবিধানিকভাবে তারা বাকশাল প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে গণতন্ত্রকে হত্যা করেছিল। ফ্যাসিবাদ কায়েম করে হাজার হাজার মানুষ হত্যা করেছে। গত বছরের ৫ আগস্ট রক্তাক্ত গণঅভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের মানুষ আওয়ামী লীগকে বিতাড়িত করে দিয়েছে। তারা ইতিহাসের জঘন্যতম গণহত্যাকারী। তাদের রাজনৈতিক মৃত্যু হয়েছে।
তিনি বলেন, জাতিসঙ্ঘ তাদের বিরুদ্ধে ১৪ শ’ মানুষ হত্যা ও ২০ হাজার মানুষকে পঙ্গু করার রিপোর্ট দিয়েছে, অথচ তাদের মধ্যে একটুও অনুশোচনা নেই বা তারা কোনো ক্ষমা প্রার্থনা করেনি। উল্টো তারা গণঅভ্যুত্থানে আন্দোলনকারীদের দুষ্কৃতকারী বলে আখ্যয়িত করছে। তারা কিভাবে বাংলাদেশে রাজনীতি করতে পারবে?
বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক মিফতাহ সিদ্দিকীর সঞ্চালনায় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আরো বলেন, মহান স্বাধীনতার ঘোষক শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান ১৯৮৯ সালের দ্বিতীয় জাতীয় সংসদে দেশের একনায়কতান্ত্রিক সংবিধান বাকশাল বিলুপ্ত করে বহুদলীয় গণতান্ত্রিক সংবিধান প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। তিনি সংবিধানে বিসমিল্লাহির রহমানির রহিম সংযুক্ত করে মহান আল্লাহর উপর অবিচল আস্থা ও বিশ্বাস প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। তিনি দেশের সব ধর্মের মানুষের সমান অধিকার নিশ্চিত করেছিলেন।
শহীদ জিয়ার আদর্শ যখন মানুষকে অনুপ্রাণিত করেছিল ঠিক তখন তাকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয় উল্লেখ করে তিনি বলেন, সংবিধানে ধর্মের ভিত্তিতে সবার সমঅধিকার প্রতিষ্ঠা করে মানুষের ধর্মীয় চর্চার স্বাধীনতা দিয়েছিলেন শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান। তিনি নিশ্চিত করতে চেয়েছিলেন এদেশে ধর্ম-বর্ণ, ভাষা ও জাতির ভিত্তিতে বিভক্তি হবে না। কিন্তু কুচক্রী মহলের হাতে তাকে শাহাদাত বরণ করতে হলো।
বিএনপি এই দেশের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব ও গণতন্ত্রের পাহারাদার উল্লেখ করে সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, বিএনপি থাকলে দেশের সাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব থাকবে। বিএনপি দুর্বল হলে বাংলাদেশ দুর্বল হবে। বিএনপির জন্ম না হলে দেশে বহুদলীয় গণতন্ত্রের প্রবর্তন হতো না, বিএনপি সুসংগঠিত না থাকলে সংসদীয় গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা হতো না, তত্ত্বাবধায়ক সরকার পদ্ধতি চালু হতো না। এই দেশ থেকে ফ্যাসিবাদ বিতাড়িত হতো না।
তিনি দেশের মানুষকে জাতীয়তাবাদী দলের সদস্য হওয়ার আহ্বান জানিয়ে বলেন, তরুণ প্রজন্মকে জাতীয়তাবাদী দলের আদর্শ সম্পর্কে জানাতে হবে, তারেক রহমানের ৩১ দফা তুলে ধরতে হবে। যেই মানুষ বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদে বিশ্বাসী, যিনি নিজেকে বাংলাদেশী পরিচয় দিবেন তিনিই জাতীয়তাবাদী দলের সদস্য হতে পারবেন।
ফ্যাসিবাদের আদর্শ লালনকারী আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা যাতে বিএনপির সদস্য হতে না পারে সেদিকে দলের নেতাকর্মীদের সতর্ক থাকার পরামর্শ দেন তিনি। সালাহউদ্দিন বলেন, যারা দেশের জনগণকে হত্যা করেছে, পঙ্গু করেছে, গুম, অপহরণ করেছে তাদের কাঠগড়ায় দাঁড়াতে হবে। বাংলাদেশে যেন কোনো দিন আর স্বৈরশাসক বা ফ্যাসিবাদ আবির্ভুত না হয় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।
তৃণমূলের নেতাকর্মীদের মূল্যায়ন ও নেতৃত্বের প্রতিযোগিতা অব্যাহত রাখার পরামর্শ দেন তিনি। বিএনপির জ্যেষ্ঠ নেতা বলেন, দলের জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে ওয়ার্ড ও ইউনিয়ন। নেতৃত্ব বাছাইকালে তৃণমূল থেকে গুরুত্ব দিতে হবে। দলে নেতৃত্বের প্রতিযোগিতা থাকা উচিত, তবে সেটা যেন প্রতিহিংসায় রূপ না নেয়। এই বিষয়ে সমন্বয় কমিটিগুলোকে খেয়াল রাখতে হবে।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্য দেন বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির কোষাধ্যক্ষ এম. রাসেদুজ্জামান মিল্লাত। সম্মানিত অতিথির বক্তব্য দেন- বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্ঠা ড. এনামুল হক চৌধুরী, আরিফুল হক চৌধুরী ও যুক্তরাজ্য বিএনপির সভাপতি এম.এ মালিক, জাতীয় নির্বাহী কমিটির সহসাংগঠনিক সম্পাদক ও সাবেক এমপি কলিম উদ্দিন আহমদ মিলন, জাতীয় নির্বাহী কমিটির সহসমবায় বিষয়ক সম্পাদক ও সাবেক এমপি শাম্মী আক্তার, এম নাসের রহমান।
অনুষ্ঠানে সিলেট জেলা ও মহানগর, সুনামগঞ্জ, মৌলভীবাজার, হবিগঞ্জ জেলা বিএনপি ও অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনসহ সিলেট বিভাগের সকল উপজেলা, পৌর এবং সিলেট মহানগরীর বিভিন্ন ওয়ার্ডের বিএনপি ও অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের সিনিয়র নেতারা উপস্থিত ছিলেন।