ঢাকা ০৪:৩১ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ২৬ ভাদ্র ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
শিরোনাম ::
লুন্টিত অস্ত্র কুমিল্লায় বিক্রি করতে গিয়ে যুবক গ্রেপ্তার পোশাক শ্রমিকদের উস্কানি দিয়ে নাশকতার সৃষ্টির অভিযোগে ছাত্রলীগ নেতা গ্রেপ্তার কমলগঞ্জে শমশেরনগর হাসপাতালে বিনামূল্যে চিকিৎসা সেবা ও ঔষধ বিতরণ বৈষম্যমুক্ত পার্বত্য চট্টগ্রাম গড়তে কাউকে পিছিয়ে রাখা হবে না-পার্বত্য উপদেষ্টা ৪৮ ঘন্টার মধ্যে সিলেটে বিদ্যুৎ সমস্যার সমাধান না হলে ঐক্যবদ্ধভাবে মাঠে নামবে ব্যবসায়ীরা এলজিইডিই হচ্ছে গ্রাম বাংলার রূপ পরিবর্তনের প্রধান কারিগর: স্থানীয় সরকার উপদেষ্টা বাজার ব্যবস্থাপনায় শূন্যস্থান পূরণ হয়েছে মাত্র, চাঁদাবাজি বন্ধ হয়নি: বাণিজ্য উপদেষ্টা রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনের সঙ্গে সেনাবাহিনী প্রধানের সাক্ষাৎ সামাজিক উন্নয়নে স্বেচ্ছাসেবী তরুণদের এগিয়ে আসতে হবে- সৈয়দ তৌফিকুল হাদী সিলেটের পাথর কোয়ারী সমুহ খোলে দেয়ার দাবীতে সংবাদ সম্মেলন

বাংলা বর্ষপঞ্জিতে যুক্ত হলো নতুন বাংলা বর্ষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ; চলছে নানা আয়োজন

আহমদ নাহিদ
  • আপডেট সময় : ১২:৫১:১২ অপরাহ্ন, রবিবার, ১৪ এপ্রিল ২০২৪ ১৬৫ বার পড়া হয়েছে

বাঙালি জাতির শাশ্বত ঐতিহ্যের বাহক পহেলা বৈশাখ। বাংলা বর্ষপঞ্জিতে যুক্ত হলো নতুন বাংলা বর্ষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ। পহেলা বৈশাখ বাঙালি জাতির জীবনে একটি পরম আনন্দের দিন।

জীর্ণ পুরাতন সবকিছু ভেসে যাক, ‘মুছে যাক গ্লানি’ এভাবে বিদায়ী সূর্যের কাছে এ আহবান জানায় বাঙালি। পহেলা বৈশাখ আমাদের সব সঙ্কীর্ণতা, কুপমণ্ডুকতা পরিহার করে উদারনৈতিক জীবন-ব্যবস্থা গড়তে উদ্বুদ্ধ করে। আমাদের মনের ভিতরের সকল ক্লেদ, জীর্ণতা দূর করে আমাদের নতুন উদোমে বাঁচার অনুপ্রেরণা যোগায়।

পহেলা বৈশাখ বাঙালির একটি সার্বজনীন লোকউৎসব। এদিন আনন্দঘন পরিবেশে বরণ করে নেওয়া হয় বাংলা নতুন বছরকে। কল্যাণ ও নতুন জীবনের প্রতীক হলো নববর্ষ। অতীতের ভুলত্রুটি ও ব্যর্থতার গ্লানি ভুলে নতুন করে সুখ-শান্তি ও সমৃদ্ধি কামনায় উদযাপিত হয় নববর্ষ।

পহেলা বৈশাখে বর্ণিল উৎসবে মাতোয়ারা সারাদেশ। ভোরের প্রথম আলো রাঙিয়ে দিয়েছে নতুন স্বপ্ন, প্রত্যাশা আর সম্ভাবনাকে। রাজধানী সহ সারাদেশ জুড়ে চলছে বর্ষবরণের নানা আয়োজন।

‘বাংলা নববর্ষ ১৪৩১’ জাঁকজমকপূর্ণভাবে উদযাপনের লক্ষ্যে জাতীয় পর্যায়ে ব্যাপক কর্মসূচি গ্রহণ করেছে সরকার। দিনটি সরকারি ছুটির দিন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদ ‘মঙ্গল শোভাযাত্রা’ ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান আয়োজন করেছে। ছায়ানট ভোরে রমনা বটমূলে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান আয়োজন করা হয়েছে।

এছাড়াও বিভিন্ন সাংস্কৃতিক সংগঠন যথাযোগ্য মর্যাদায় বাংলা নববর্ষ উদযাপন করা হচ্ছে। বাংলা নববর্ষের অনুষ্ঠান আবশ্যিকভাবে জাতীয় সংগীত ও এসো হে বৈশাখ গান পরিবেশনের মাধ্যমে শুরু হয়।

বাংলা নববর্ষের তাৎপর্য এবং মঙ্গল শোভাযাত্রার ইতিহাস ও ইউনেস্কো কর্তৃক এটিকে বিশ্ব সংস্কৃতির ঐতিহ্য হিসেবে অন্তর্ভুক্তির বিষয়টি তুলে ধরে এদিন সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয় ও বাংলা একাডেমির উদ্যোগে বিভিন্ন অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হচ্ছে।

বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি দিনব্যাপী অনুষ্ঠানমালার আয়োজন করেছে। বাংলা নববর্ষে সব কারাগার, হাসপাতাল ও শিশু পরিবারে (এতিমখানা) উন্নতমানের ঐতিহ্যবাহী বাঙালি খাবারের আয়োজন করা হয়েছে।

এক সময় নববর্ষ পালিত হতো আর্তব উৎসব বা ঋতুধর্মী উৎসব হিসেবে। তখন এর সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ছিল কৃষির, কারণ কৃষিকাজ ছিল ঋতুনির্ভর। পরে কৃষিকাজ ও খাজনা আদায়ের সুবিধার জন্য মোঘল সম্রাট আকবরের সময়ে বাংলা সন গণনার শুরু হয়।

অতীতে বাংলা নববর্ষের মূল উৎসব ছিল হালখাতা। এটি পুরোপুরিই একটি অর্থনৈতিক ব্যাপার। গ্রামে- গঞ্জে-নগরে ব্যবসায়ীরা নববর্ষের প্রারম্ভে তাদের পুরনো হিসেব-নিকাশ সম্পন্ন করে হিসেবের নতুন খাতা খুলতেন। এ উপলক্ষে তারা নতুন-পুরাতন খদ্দেরদের আমন্ত্রণ জানিয়ে মিষ্টি বিতরণ করতেন এবং নতুনভাবে তাদের সঙ্গে ব্যবসায়িক যোগসূত্র স্থাপন করতেন। চিরাচরিত এ অনুষ্ঠানটি আজও পালিত হয়।

মূলত ১৫৫৬ সালে কার্যকর হওয়া বাংলা সন প্রথমদিকে পরিচিত ছিল ফসলি সন নামে। পরে তা পরিচিত হয় বঙ্গাব্দ নামে। কৃষিভিত্তিক গ্রামীণ সমাজের সঙ্গে বাংলা বর্ষের ইতিহাস জড়িয়ে থাকলেও এর সঙ্গে রাজনৈতিক ইতিহাসেরও সংযোগ ঘটেছে।

পাকিস্তান শাসনামলে বাঙালি জাতীয়তাবাদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক তৈরি হয় বর্ষবরণ অনুষ্ঠানের। আর ষাটের দশকের শেষে তা বিশেষ মাত্রা পায় রমনা বটমূলে ছায়ানটের আয়োজনের মাধ্যমে। এ সময় ঢাকায় নাগরিক পর্যায়ে ছায়ানটের উদ্যোগে সীমিত আকারে বর্ষবরণ শুরু হয়। আমাদের মহান স্বাধীনতার পর ধীরে ধীরে এই উৎসব নাগরিক জীবনে প্রভাব বিস্তার করতে শুরু করে।

পহেলা বৈশাখের বর্ষবরণ অনুষ্ঠানে বাঙালির অসাম্প্রদায়িক এবং গণতান্ত্রিক চেতনার বহিঃপ্রকাশ ঘটতে থাকে। কালক্রমে বর্ষবরণ অনুষ্ঠান এখন শুধু আনন্দ-উল্লাসের উৎসব নয়, এটি বাঙালি সংস্কৃতির একটি শক্তিশালী ধারক-বাহক হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।

১৯৮৯ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা ইনস্টিটিউটের উদ্যোগে বের হয় প্রথম মঙ্গল শোভাযাত্রা। যা ২০১৬ সালের ৩০ নভেম্বর ইউনেস্কো এ শোভাযাত্রাকে বিশ্ব সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের মর্যাদা দেয়।

নিউজটি শেয়ার করুন

আপলোডকারীর তথ্য
ট্যাগস :

বাংলা বর্ষপঞ্জিতে যুক্ত হলো নতুন বাংলা বর্ষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ; চলছে নানা আয়োজন

আপডেট সময় : ১২:৫১:১২ অপরাহ্ন, রবিবার, ১৪ এপ্রিল ২০২৪

বাঙালি জাতির শাশ্বত ঐতিহ্যের বাহক পহেলা বৈশাখ। বাংলা বর্ষপঞ্জিতে যুক্ত হলো নতুন বাংলা বর্ষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ। পহেলা বৈশাখ বাঙালি জাতির জীবনে একটি পরম আনন্দের দিন।

জীর্ণ পুরাতন সবকিছু ভেসে যাক, ‘মুছে যাক গ্লানি’ এভাবে বিদায়ী সূর্যের কাছে এ আহবান জানায় বাঙালি। পহেলা বৈশাখ আমাদের সব সঙ্কীর্ণতা, কুপমণ্ডুকতা পরিহার করে উদারনৈতিক জীবন-ব্যবস্থা গড়তে উদ্বুদ্ধ করে। আমাদের মনের ভিতরের সকল ক্লেদ, জীর্ণতা দূর করে আমাদের নতুন উদোমে বাঁচার অনুপ্রেরণা যোগায়।

পহেলা বৈশাখ বাঙালির একটি সার্বজনীন লোকউৎসব। এদিন আনন্দঘন পরিবেশে বরণ করে নেওয়া হয় বাংলা নতুন বছরকে। কল্যাণ ও নতুন জীবনের প্রতীক হলো নববর্ষ। অতীতের ভুলত্রুটি ও ব্যর্থতার গ্লানি ভুলে নতুন করে সুখ-শান্তি ও সমৃদ্ধি কামনায় উদযাপিত হয় নববর্ষ।

পহেলা বৈশাখে বর্ণিল উৎসবে মাতোয়ারা সারাদেশ। ভোরের প্রথম আলো রাঙিয়ে দিয়েছে নতুন স্বপ্ন, প্রত্যাশা আর সম্ভাবনাকে। রাজধানী সহ সারাদেশ জুড়ে চলছে বর্ষবরণের নানা আয়োজন।

‘বাংলা নববর্ষ ১৪৩১’ জাঁকজমকপূর্ণভাবে উদযাপনের লক্ষ্যে জাতীয় পর্যায়ে ব্যাপক কর্মসূচি গ্রহণ করেছে সরকার। দিনটি সরকারি ছুটির দিন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদ ‘মঙ্গল শোভাযাত্রা’ ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান আয়োজন করেছে। ছায়ানট ভোরে রমনা বটমূলে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান আয়োজন করা হয়েছে।

এছাড়াও বিভিন্ন সাংস্কৃতিক সংগঠন যথাযোগ্য মর্যাদায় বাংলা নববর্ষ উদযাপন করা হচ্ছে। বাংলা নববর্ষের অনুষ্ঠান আবশ্যিকভাবে জাতীয় সংগীত ও এসো হে বৈশাখ গান পরিবেশনের মাধ্যমে শুরু হয়।

বাংলা নববর্ষের তাৎপর্য এবং মঙ্গল শোভাযাত্রার ইতিহাস ও ইউনেস্কো কর্তৃক এটিকে বিশ্ব সংস্কৃতির ঐতিহ্য হিসেবে অন্তর্ভুক্তির বিষয়টি তুলে ধরে এদিন সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয় ও বাংলা একাডেমির উদ্যোগে বিভিন্ন অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হচ্ছে।

বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি দিনব্যাপী অনুষ্ঠানমালার আয়োজন করেছে। বাংলা নববর্ষে সব কারাগার, হাসপাতাল ও শিশু পরিবারে (এতিমখানা) উন্নতমানের ঐতিহ্যবাহী বাঙালি খাবারের আয়োজন করা হয়েছে।

এক সময় নববর্ষ পালিত হতো আর্তব উৎসব বা ঋতুধর্মী উৎসব হিসেবে। তখন এর সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ছিল কৃষির, কারণ কৃষিকাজ ছিল ঋতুনির্ভর। পরে কৃষিকাজ ও খাজনা আদায়ের সুবিধার জন্য মোঘল সম্রাট আকবরের সময়ে বাংলা সন গণনার শুরু হয়।

অতীতে বাংলা নববর্ষের মূল উৎসব ছিল হালখাতা। এটি পুরোপুরিই একটি অর্থনৈতিক ব্যাপার। গ্রামে- গঞ্জে-নগরে ব্যবসায়ীরা নববর্ষের প্রারম্ভে তাদের পুরনো হিসেব-নিকাশ সম্পন্ন করে হিসেবের নতুন খাতা খুলতেন। এ উপলক্ষে তারা নতুন-পুরাতন খদ্দেরদের আমন্ত্রণ জানিয়ে মিষ্টি বিতরণ করতেন এবং নতুনভাবে তাদের সঙ্গে ব্যবসায়িক যোগসূত্র স্থাপন করতেন। চিরাচরিত এ অনুষ্ঠানটি আজও পালিত হয়।

মূলত ১৫৫৬ সালে কার্যকর হওয়া বাংলা সন প্রথমদিকে পরিচিত ছিল ফসলি সন নামে। পরে তা পরিচিত হয় বঙ্গাব্দ নামে। কৃষিভিত্তিক গ্রামীণ সমাজের সঙ্গে বাংলা বর্ষের ইতিহাস জড়িয়ে থাকলেও এর সঙ্গে রাজনৈতিক ইতিহাসেরও সংযোগ ঘটেছে।

পাকিস্তান শাসনামলে বাঙালি জাতীয়তাবাদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক তৈরি হয় বর্ষবরণ অনুষ্ঠানের। আর ষাটের দশকের শেষে তা বিশেষ মাত্রা পায় রমনা বটমূলে ছায়ানটের আয়োজনের মাধ্যমে। এ সময় ঢাকায় নাগরিক পর্যায়ে ছায়ানটের উদ্যোগে সীমিত আকারে বর্ষবরণ শুরু হয়। আমাদের মহান স্বাধীনতার পর ধীরে ধীরে এই উৎসব নাগরিক জীবনে প্রভাব বিস্তার করতে শুরু করে।

পহেলা বৈশাখের বর্ষবরণ অনুষ্ঠানে বাঙালির অসাম্প্রদায়িক এবং গণতান্ত্রিক চেতনার বহিঃপ্রকাশ ঘটতে থাকে। কালক্রমে বর্ষবরণ অনুষ্ঠান এখন শুধু আনন্দ-উল্লাসের উৎসব নয়, এটি বাঙালি সংস্কৃতির একটি শক্তিশালী ধারক-বাহক হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।

১৯৮৯ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা ইনস্টিটিউটের উদ্যোগে বের হয় প্রথম মঙ্গল শোভাযাত্রা। যা ২০১৬ সালের ৩০ নভেম্বর ইউনেস্কো এ শোভাযাত্রাকে বিশ্ব সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের মর্যাদা দেয়।