পার্বত্য জেলার সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যসমৃদ্ধ বিপনী বিতান উদ্বোধন করলেন পার্বত্য প্রতিমন্ত্রী
- আপডেট সময় : ১২:১১:১২ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৪ মে ২০২৪ ৪৫ বার পড়া হয়েছে
রাজধানীর বেইলি রোডস্থ শেখ হাসিনা পার্বত্য চট্টগ্রাম কমপ্লেক্সে এক মনোরম পরিবেশে উদ্বোধন হলো খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা পরিষদের বিক্রয় ও প্রদশর্নী কেন্দ্র, এটি পরিচালনায় আছে সিএইচটি গ্রুপ ও RENG Hill of Essence।
গতকাল সোমবার (১৩ মে) সন্ধ্যায় পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী জনাব কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরা এমপি পার্বত্য চট্টগ্রামের উপজাতীয় সম্প্রদায়ের ঐতিহ্য হস্ত ও কারু শিল্পের দৃষ্টি নন্দন পণ্যসামগ্রীর পসরাসমৃদ্ধ বিক্রয় ও প্রদর্শনী কেন্দ্র দুটির শুভ উদ্বোধন করেন।
উদ্বোধনী এ অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে আরও উপস্থিত ছিলেন টাস্কফোর্স চেয়ারম্যান (সিনিয়র সচিব) জনাব সুদত্ত চাকমা, ট্যুরিস্ট বাংলাদেশ পুলিশের এডিশনাল ডিআইজি জনাব বিধান ত্রিপুরা, দৈনিক প্রতিদিনের চিত্র পত্রিকার সম্পাদক ও প্রকাশক জনাব অয়ন আহমেদ, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা রাজীব ত্রিপুরা, খাগড়াছড়ি সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি জনাব প্রদীপ চৌধুরী, পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী’র সহকারী একান্ত সচিব জনাব খগেন্দ্র ত্রিপুরা, এবং ইউএনডিপি’র প্রোগ্রাম অফিসার জনাব এ, এ, মং উপস্থিত ছিলেন।
উদ্বোধন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে পার্বত্য প্রতিমন্ত্রী জনাব কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরা এমপি বলেন, বেইলি রোডের পার্বত্য চট্টগ্রাম কমপ্লেক্সের বিপনী বিতানগুলোতে সব সম্প্রদায়ের মানুষের ব্যবহারযোগ্য পোশাক, পাহাড়ি অঞ্চলে উৎপাদিত ফরমালিন ও বিষমুক্ত মৌসুমী ফল, খাদ্য-পণ্য ও হস্ত শিল্পসামগ্রী পাওয়া যাবে। উপজাতি সম্প্রদায়ের তৈরী পণ্য নিয়ে সমৃদ্ধ পার্বত্য চট্টগ্রাম কমপ্লেক্সের বিক্রয় কেন্দ্রের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য অত্যন্ত মহৎ। এ বিক্রয় কেন্দ্র রাজধানী ঢাকায় বসবাসরত তিন পার্বত্য জেলার অধিবাসী এবং দেশি-বিদেশি সকলের জন্য উন্মুক্ত থাকবে।
প্রতিমন্ত্রী জনাব কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরা এমপি আরো বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার অনেকগুলো ইচ্ছার মধ্যে এই ইচ্ছা অনন্য আরেকটি ইচ্ছা, সেটি হচ্ছে পার্বত্য চট্টগ্রামসহ বাংলাদেশের সকল জাতিগোষ্ঠীর কৃষ্টি, সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের বন্ধন যেন একে অপরে ভাগাভাগি করে নেয়। তাই প্রধানমন্ত্রীর ঐকান্তিক ইচ্ছায় রাজধানীর বুকে পার্বত্যবাসীদের জন্য পার্বত্য চট্টগ্রাম কমপ্লেক্স নির্মাণ করা হয়েছে। পার্বত্য অঞ্চল ব্যতীত দেশের অন্যান্য অঞ্চল ও বাংলাদেশের বাইরে যারা আছেন, তারাও পার্বত্য চট্টগ্রামের কৃষ্টি ও সংস্কৃতি উপভোগের সমঅংশীদারে অংশীদারী হবেন।
রাজধানী ঢাকার বুকে নাট্য পাড়া হিসেবে খ্যাত বেইলী রোডের প্রাণকেন্দ্রে পাহাড়িদের নিপুন হাতে তৈরী উৎপাদিত হস্ত শিল্পসামগ্রী এবং ফরমালিন মুক্ত অর্গানিক ফুড ও মসলার ব্যাপক সমাহার থাকবে এ বিক্রয় কেন্দ্রে। খাগড়াছড়ি পার্বত্য অঞ্চলের অন্যতম একটি জেলা। এখানকার উৎপাদিত হলুদ, মরিচ, পেঁপে, মুড়ি, খই, ড্রাই আম, নারিকেল তেল, ঘি, বাঁশের তৈরি তৈজসপত্র এখানে প্রদর্শন করা হবে। এছাড়াও পার্বত্য জেলার ঐতিহ্যবাহী পোশাক পরিচ্ছদ যেমন- ত্রিপুরাদের ঐতিহ্যবাহী পোশাক রিনাই ও রিসা, মাটির টব, বার্মিজ লুঙ্গি, মার্মাদের ঐতিহ্যবাহী থামি কাপড়, মাছ ধরার লুই, বাঁশের বাঁশি, বেতের ঝুড়ি (কাবাং), লাল বিন্নি চাল, সাদা বিন্নি চাল, হরেক রকমের সবজি ও আখের গুড়সহ নানা রকমের খাদ্য-পণ্য পাওয়া যাবে এখানে। এ বিক্রয় কেন্দ্রগুলো থেকে মারমা, চাকমা, ত্রিপুরা, ম্রো, তঞ্চগ্যা, বাঙ্গালি, অহমিয়া, খেয়াং, খুমি, গুর্খা, চাক, পাংখোয়া, বম, লুসাই, রাখাইন এবং সাঁওতালসহ সকল সম্প্রদায় তাদের পছন্দ মতো জিনিসপত্র অনায়াসেই কেনাকাটা করতে পারবেন।
সবচেয়ে আশার কথা হলো, পার্বত্য চট্টগ্রামের সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য দেশ ও বিশ্বময় ছড়িয়ে দিতে পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান তিন পার্বত্য জেলা পরিষদের বিশেষ উদ্যোগে এই বিক্রয় ও প্রদর্শনী কেন্দ্র পরিচালিত হচ্ছে। পার্বত্য অঞ্চলের বিভিন্ন ঐতিহ্যবাহী পণ্যাদি নিয়ে এ বিক্রয় ও প্রদর্শনী কেন্দ্রটি সারা বছর জুড়ে ক্রেতা ও দর্শনার্থীদের জন্য সকাল ৮ টা থেকে রাত ৮ টা পর্যন্ত খোলা থাকবে।
সব শেষে প্রতিমন্ত্রী জনাব কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরা এমপি রাজধানীর বেইলী রোডস্থ পার্বত্য চট্টগ্রাম কমপ্লেক্সের বিক্রয় কেন্দ্রে সর্বস্তরের সবাইকে ঘুরে যাওয়ার আহ্বান জানান। তিনি বলেন, সবাই যদি এই পণ্যসামগ্রী ক্রয় করে এর মানগত দিক বিবেচনায় নিয়ে পরামর্শ প্রদান করেন তবে এই পণ্য সামগ্রী বিশ্ব বাজারে বিক্রি করে দেশ প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করতে পারবে। ইতিমধ্যে এগুলো বিশ্ববাজারে ব্যাপক সমাদৃত হচ্ছে। যা উদ্যোগক্তাদের উৎসাহিত করছে। ইতিমধ্যে জননেত্রী শেখ হাসিনার সরকার পার্বত্য অঞ্চলের বিভিন্ন ঐতিহ্যবাহী পণ্যাদি বিশ্ব বাজারে তুলে ধরতে ব্যাপক উদ্যোগ নিয়েছেন। যার ফলস্বরূপ এই বিক্রয় ও প্রদর্শনী কেন্দ্র। অতীতের কোন সরকারই এভাবে কার্যকরী কোন উদ্যোগ গ্রহণ করেনি।
পার্বত্য প্রতিমন্ত্রী পাহাড়ি উদ্যোগক্তাদের পণ্যের মান বিশ্বমানের সঙ্গে তাল মিলিয়ে রাখার ব্যাপারে তাগিদ দেন। তিনি বিভিন্ন প্রিন্ট, প্রেস ও অনলাইন মিডিয়ার সাংবাদিকদের ভুয়সী প্রশংসা করেন পার্বত্য অঞ্চলের জীবনযাত্রা ও পণ্য সামগ্রী প্রচার করার জন্য।
চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের জনসংযোগ কর্মকর্তা মো. রেজুয়ান খান এ নিউজটি নিশ্চিত করেছেন।