ঢাকা ০৭:০৪ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২১ মার্চ ২০২৫, ৭ চৈত্র ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
শিরোনাম ::
বিশ্বের সকল মা-ই জন্ম দেন সন্তান, গাজার মায়েরা জন্ম দেন যোদ্ধা- ডা: শফিকুর রহমান আওয়ামীলীগকে ফিরিয়ে আনার সমঝোতায় চাপ প্রয়োগের অভিযোগ হাসনাত আবদুল্লাহর ! কানাডায় পিজিপি প্রোগ্রামের আওতায় নতুন আবেদন গ্রহণ বন্ধ ! বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া এপ্রিলের মাঝামাঝি দেশে ফিরছেন ! নির্বাচিত সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করলে দেশে শান্তি ফিরবে: ইমদাদ চৌধুরী ঝরনা তরুন সংঘের মাহে রমজানে তিন ধাপে উপহার সামগ্রী বিতরন সম্পন্ন সিলেটে ১৮নং ওয়ার্ড বিএনপির ইফতার বিতরণ কর্মসূচি সম্পন্ন সিলেট জেলা ও মহানগর যুবদলের ইফতার ও দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত জুলাই: মাতৃভূমি অথবা মৃত্যু গ্রন্থের প্রকাশনা অনুষ্ঠানে উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ প্রসঙ্গ: স্বাধীনতার ঘোষণা এবং জাতির জনক- গাজী আব্দুল কাদির মুকুল

পারিবারিক কারণে ভাইকে হত্যা করেন আপন বড় ভাই- প্রেস ব্রিফিংয়ে পিবিএন

টাঙাইল প্রতিনিধি:
  • আপডেট সময় : ০৭:১৮:০৪ অপরাহ্ন, রবিবার, ১৮ ফেব্রুয়ারী ২০২৪ ১২৭ বার পড়া হয়েছে

টাঙ্গাইল প্রতিনিধি:

টাঙ্গাইলের কালিহাতী উপজেলার পারখী ইউনিয়নের বগা বিলে মাটিচাপা দেওয়া গলিত অজ্ঞাত মরদেহ উদ্ধারের ঘটনার রহস্য উদ্ঘাটন করেছে পিবিআই।

জানা যায়, নিজের স্ত্রী-কে যৌণ হয়রানিসহ পারিবারিক নানা কলহের কারণে প্রবাস ফেরত বড় ভাই মো. সোহেল তার ছোট ভাই মুকুলকে (২৪) পাশের সখীপুর উপজেলা থেকে ডেকে এনে এক বন্ধুর সহযোগিতায় শ্বাসরোধে খুন করে বগা বিলের কাঁদামাটির নিচে পুঁতে রাখে।

রোববার (১৮ ফেব্রুয়ারি) টাঙ্গাইল পিবিআইয়ের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ সিরাজ আমীন এক প্রেসব্রিফিংয়ে এ হত্যা মামলার রহস্য উদ্ঘাটনের বিষয়ে বর্ণনা দেন।

পুলিশ সুপার মোহাম্মদ সিরাজ আমীন প্রেসব্রিফিংয়ে জানান, পারখী ইউনিয়নের মনির উদ্দিন উচ্চ বিদ্যালয়ের উত্তর পাশ থেকে গত ১২ ফেব্রুয়ারি সকালে কাঁদামাটির নিচে পুঁতে রাখা গলিত জনৈক ব্যক্তির মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। প্রাথমিকভাবে ওই গলিত মরদেহ সনাক্ত করা যায়নি। পরে জামা-কাপড় দেখে পারখী গ্রামের গৃহবধূ লিমা আক্তার মরদেহটি তার নিখোঁজ স্বামী মো. মুকুলের বলে সনাক্ত করেন। মুকুল সখীপুর উপজেলার ইন্দারজানী এলাকায় শ্বশুরবাড়িতে থেকে খুংগারচালা বাজারে ইলেট্রিক দোকান চালাতেন। গত ২৭ জানুয়ারি মুকুল তার স্ত্রী লিমা আক্তারকে মোবাইল ফোনে জানায় তিনি পৈত্রিক বাড়ি কালিহাতীর পারখী যাচ্ছেন এবং রাতে ফিরবেন না। এরপর থেকে মুকুল নিখোঁজ ছিলেন। তিনি কালিহাতীর পারখী গ্রামের মো. হানিফার ছেলে। বগা বিলে কাঁদামাটির নিচ থেকে পাওয়া মরদেহটি সনাক্ত করার পর তার স্ত্রী লিমা আক্তার বাদি হয়ে কালিহাতী থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। ঘটনাটি চাঞ্চল্যকর ও ক্লুলেস হওয়ায় টাঙ্গাইল পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) ছায়া তদন্ত শুরু করে।

তিনি জানান, টাঙ্গাইল পিবিআইয়ের পরিদর্শক মোস্তাফিজুর রহমান আনসারীর নেতৃত্বে প্রথাগত পদ্ধতি ও তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তায় ওই চাঞ্চল্যকর ও ক্লুলেস হত্যা মামলার রহস্য উদ্ঘাটন করা হয়। ১৭ ফেব্রুয়ারি (শনিবার) রাতে ঢাকা ও গাজীপুর জেলার বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে এ ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে নিহত মুকুলের প্রবাস ফেরত বড় ভাই মো. সোহেল (৩৪) ও তার এক প্রকার বন্ধু পরেশ চন্দ্র শীল ওরফে নওমুসলিম নাজমুল হোসেনকে (৪০) গ্রেপ্তার করা হয়। পরে গ্রেপ্তারকৃতরা মুকুলকে হত্যা করার কথা স্বীকার করে।

গ্রেপ্তারকৃতদের বরাতে পুলিশ সুপার জানান, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেপ্তারকৃত সোহেল জানিয়েছে- তার ছোটভাই মুকুল মাদকাসক্ত ও মাদক বিক্রেতা ছিল। তিনি প্রবাসে থাকাকালে পাঠানো টাকা মাদকের পেছনে নষ্ট করেছে। তার স্ত্রী লিমা আক্তারকে মুকুল প্রায়ই অনৈতিক প্রস্তাব দিত। প্রবাস থেকে ফিরে আসার পর তিনি মুকুলকে অনেক বুঝিয়েছেন, কিন্তু কথা শুনেনি। উপরন্তু তার যৌন হয়রানির মাত্রা আরও বেড়ে যায়। স্ত্রীকে যৌন নির্যাতনের কারণেই তিনি মুকুলকে হত্যার পরিকল্পনা করেন। তার পরিচিত বন্ধু পরেশ চন্দ্র শীল ওরফে নওমুসলিম নাজমুল হোসেনকে ১৬ হাজার টাকায় পরিকল্পনার অংশ হিসেবে সাথে জড়িত করেন।

পুলিশ সুপার গ্রেপ্তারকৃত সোহেলের বরাতে জানান, পরিকল্পনা অনুযায়ী ২৭ জানুয়ারি রাতে মুকুলকে মনির উদ্দিন উচ্চ বিদ্যালয়ের মাঠে ডেকে আনেন। পরেশ চন্দ্র শীল ওরফে নওমুসলিম নাজমুল হোসেন তার সাথে কথা বলতে বলতে মনির উদ্দিন উচ্চ বিদ্যালয়ের উত্তর দিকে নিয়ে যান। এক পর্যায়ে মুকুলের গলার মাফলার চেপে ধরে শ্বাসরোধে তাকে হত্যা করে। এ সময় সোহেলও হত্যায়কান্ডে অংশ নেয়। এরআগে হামিদপুর বাজার থেকে কিনে আনা কোদাল দিয়ে বগা বিলের কাঁদামাটি খুঁড়ে তাকে পুঁতে রাখা হয়।

টাঙ্গাইল পিবিআই কার্যালয়ে জণাকীর্ণ প্রেসব্রিফিংয়ে টাঙ্গাইল প্রেসক্লাবের সভাপতি জাফর আহমেদ, সাধারণ সম্পাদক মো. নাসির উদ্দিন সহ বিভিন্ন প্রিণ্ট ও ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ার প্রতিনিধি ও পিবিআই কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

নিউজটি শেয়ার করুন

আপলোডকারীর তথ্য
ট্যাগস :

পারিবারিক কারণে ভাইকে হত্যা করেন আপন বড় ভাই- প্রেস ব্রিফিংয়ে পিবিএন

আপডেট সময় : ০৭:১৮:০৪ অপরাহ্ন, রবিবার, ১৮ ফেব্রুয়ারী ২০২৪

টাঙ্গাইল প্রতিনিধি:

টাঙ্গাইলের কালিহাতী উপজেলার পারখী ইউনিয়নের বগা বিলে মাটিচাপা দেওয়া গলিত অজ্ঞাত মরদেহ উদ্ধারের ঘটনার রহস্য উদ্ঘাটন করেছে পিবিআই।

জানা যায়, নিজের স্ত্রী-কে যৌণ হয়রানিসহ পারিবারিক নানা কলহের কারণে প্রবাস ফেরত বড় ভাই মো. সোহেল তার ছোট ভাই মুকুলকে (২৪) পাশের সখীপুর উপজেলা থেকে ডেকে এনে এক বন্ধুর সহযোগিতায় শ্বাসরোধে খুন করে বগা বিলের কাঁদামাটির নিচে পুঁতে রাখে।

রোববার (১৮ ফেব্রুয়ারি) টাঙ্গাইল পিবিআইয়ের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ সিরাজ আমীন এক প্রেসব্রিফিংয়ে এ হত্যা মামলার রহস্য উদ্ঘাটনের বিষয়ে বর্ণনা দেন।

পুলিশ সুপার মোহাম্মদ সিরাজ আমীন প্রেসব্রিফিংয়ে জানান, পারখী ইউনিয়নের মনির উদ্দিন উচ্চ বিদ্যালয়ের উত্তর পাশ থেকে গত ১২ ফেব্রুয়ারি সকালে কাঁদামাটির নিচে পুঁতে রাখা গলিত জনৈক ব্যক্তির মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। প্রাথমিকভাবে ওই গলিত মরদেহ সনাক্ত করা যায়নি। পরে জামা-কাপড় দেখে পারখী গ্রামের গৃহবধূ লিমা আক্তার মরদেহটি তার নিখোঁজ স্বামী মো. মুকুলের বলে সনাক্ত করেন। মুকুল সখীপুর উপজেলার ইন্দারজানী এলাকায় শ্বশুরবাড়িতে থেকে খুংগারচালা বাজারে ইলেট্রিক দোকান চালাতেন। গত ২৭ জানুয়ারি মুকুল তার স্ত্রী লিমা আক্তারকে মোবাইল ফোনে জানায় তিনি পৈত্রিক বাড়ি কালিহাতীর পারখী যাচ্ছেন এবং রাতে ফিরবেন না। এরপর থেকে মুকুল নিখোঁজ ছিলেন। তিনি কালিহাতীর পারখী গ্রামের মো. হানিফার ছেলে। বগা বিলে কাঁদামাটির নিচ থেকে পাওয়া মরদেহটি সনাক্ত করার পর তার স্ত্রী লিমা আক্তার বাদি হয়ে কালিহাতী থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। ঘটনাটি চাঞ্চল্যকর ও ক্লুলেস হওয়ায় টাঙ্গাইল পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) ছায়া তদন্ত শুরু করে।

তিনি জানান, টাঙ্গাইল পিবিআইয়ের পরিদর্শক মোস্তাফিজুর রহমান আনসারীর নেতৃত্বে প্রথাগত পদ্ধতি ও তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তায় ওই চাঞ্চল্যকর ও ক্লুলেস হত্যা মামলার রহস্য উদ্ঘাটন করা হয়। ১৭ ফেব্রুয়ারি (শনিবার) রাতে ঢাকা ও গাজীপুর জেলার বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে এ ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে নিহত মুকুলের প্রবাস ফেরত বড় ভাই মো. সোহেল (৩৪) ও তার এক প্রকার বন্ধু পরেশ চন্দ্র শীল ওরফে নওমুসলিম নাজমুল হোসেনকে (৪০) গ্রেপ্তার করা হয়। পরে গ্রেপ্তারকৃতরা মুকুলকে হত্যা করার কথা স্বীকার করে।

গ্রেপ্তারকৃতদের বরাতে পুলিশ সুপার জানান, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেপ্তারকৃত সোহেল জানিয়েছে- তার ছোটভাই মুকুল মাদকাসক্ত ও মাদক বিক্রেতা ছিল। তিনি প্রবাসে থাকাকালে পাঠানো টাকা মাদকের পেছনে নষ্ট করেছে। তার স্ত্রী লিমা আক্তারকে মুকুল প্রায়ই অনৈতিক প্রস্তাব দিত। প্রবাস থেকে ফিরে আসার পর তিনি মুকুলকে অনেক বুঝিয়েছেন, কিন্তু কথা শুনেনি। উপরন্তু তার যৌন হয়রানির মাত্রা আরও বেড়ে যায়। স্ত্রীকে যৌন নির্যাতনের কারণেই তিনি মুকুলকে হত্যার পরিকল্পনা করেন। তার পরিচিত বন্ধু পরেশ চন্দ্র শীল ওরফে নওমুসলিম নাজমুল হোসেনকে ১৬ হাজার টাকায় পরিকল্পনার অংশ হিসেবে সাথে জড়িত করেন।

পুলিশ সুপার গ্রেপ্তারকৃত সোহেলের বরাতে জানান, পরিকল্পনা অনুযায়ী ২৭ জানুয়ারি রাতে মুকুলকে মনির উদ্দিন উচ্চ বিদ্যালয়ের মাঠে ডেকে আনেন। পরেশ চন্দ্র শীল ওরফে নওমুসলিম নাজমুল হোসেন তার সাথে কথা বলতে বলতে মনির উদ্দিন উচ্চ বিদ্যালয়ের উত্তর দিকে নিয়ে যান। এক পর্যায়ে মুকুলের গলার মাফলার চেপে ধরে শ্বাসরোধে তাকে হত্যা করে। এ সময় সোহেলও হত্যায়কান্ডে অংশ নেয়। এরআগে হামিদপুর বাজার থেকে কিনে আনা কোদাল দিয়ে বগা বিলের কাঁদামাটি খুঁড়ে তাকে পুঁতে রাখা হয়।

টাঙ্গাইল পিবিআই কার্যালয়ে জণাকীর্ণ প্রেসব্রিফিংয়ে টাঙ্গাইল প্রেসক্লাবের সভাপতি জাফর আহমেদ, সাধারণ সম্পাদক মো. নাসির উদ্দিন সহ বিভিন্ন প্রিণ্ট ও ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ার প্রতিনিধি ও পিবিআই কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।