দেশে ভয়াবহ অর্থনৈতিক সংকট চলছে- রংপুরে জিএম কাদের
- আপডেট সময় : ০৮:১১:১৭ অপরাহ্ন, রবিবার, ১৯ মে ২০২৪ ১১১ বার পড়া হয়েছে
সংসদের বিরোধী দলীয় নেতা জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ কাদের এমপি বলেছেন, দেশে এখন ভয়াবহ অর্থনৈতিক সংকট চলছে। সামনে যেটি আরও বিপজ্জনক হতে পারে। এ অবস্থা দীর্ঘদিন ধরে চলে আসছে। সরকার এ ব্যাপারে কার্যকর কোন পদক্ষেপ নিচ্ছেনা। সরকার দলীয় নেতাকর্মী ও বিভিন্ন সেক্টরে সীমাহীন দুর্নীতি এর মূল কারণ। যা মোকাবিলা করতে সরকার সম্পূর্ণভাবে ব্যর্থ।
আজ রোববার (১৯ মে) বেলা সাড়ে ১২ টায় নিজ নির্বাচনী এলাকা রংপুর সফরে এসে সাকির্ট হাউজে প্রাঙ্গণে প্রিন্ট, ইলেক্ট্রনিক্স ও অনলাইন মিডিয়ার সাংবাদিকদের সাথে আলাপকালে তিনি এসব কথা বলেন।
জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যান জিএম কাদের এমপি বলেন, অর্থনৈতিক অবস্থা ভয়াবহ সামনের সংকট আরো প্রকট আকার ধারন করতে পারে সে জন্যই সাংবাদিকদের বাংলাদেশ ব্যাংকে প্রবেশাধিকার নিষিদ্ধ করা হয়েছে। এটা সরকারের একটা গণবিরোধী সিদ্ধান্ত। এটা বাকস্বাধীনতা রুদ্ধ করার শামিল।
অর্থনৈতিক দুরবস্থার কথা বলতে গিয়ে তিনি বলেন, স্বাভাবিকভাবে তিনমাসের আমদানি ব্যয় সমান রিজার্ভ থাকার কথা। সে হিসাবে আমাদের দেশে এখন রিজার্ভ থাকার কথা ৭ থেকে ৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। কিন্তু এখন আছে মাত্র ৪ থেকে ৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। আর সব মিলিয়ে ১৫ বিলিয়ন ডলারও নেই, ১১ বিলিয়ন ডলার আছে কিনা সন্দেহ। এই অবস্থায় প্রতিদিনই কমে যাচ্ছে টাকার ভ্যালু। মূল্যস্ফীতির কারণে হু হু করে বেড়েই চলেছে দ্রব্যমূল্য। দ্রব্যমূল্যের উর্ধ্বগতি থামানোই যাচ্ছে না।
জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জিএম কাদের বলেন, সম্পূর্ণ পরিকল্পিতভাবে বাংলাদেশ ব্যাংকে সাংবাদিকদের প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে। স্বাধীন দেশে এটা ঠিক না। বাংলাদেশ ব্যাংক জনগণের সম্পদ। এই সম্পদ সরকার ঠিকঠাকভাবে রক্ষণাবেক্ষণ করছে কিনা, সেই বিষয়ে জনগণকে জানতে হবে। আর জনগণ সংবাদের মাধ্যমে জানতে পারে। এটা স্বাধীন জাতি হিসেবে আমাদের অধিকার। আমাদের দেশে বিনিয়োগ আসছে না। আমরা যে পরিমান খরচ করছি তার থেকে অনেক কম আমাদের এখানে প্রবেশ করছে। আমরা কি কষ্ট করছি, আগামীতে আরো কি হবে এগুলো সবাইকে জানাতে হবে, ভাবতে হবে। সরকার এগুলো গোপন করছে। গোপন করার অর্থ আপনারা জনগণের স্বার্থ বিরোধী কিছু করছেন। না জানানোটাও একটা অপরাধ।
তিনি আরও বলেন, দেশে প্রতিনিয়ত ডলারের দাম বেড়েই চলেছে। টাকা দিয়ে ডলার পাওয়া যাচ্ছে না। বিদেশি এয়ারলাইন্স কোম্পানিগুলো টিকিট বিক্রি করে তাদের দেশে টাকা নিতে পারছে না ডলারের অভাবে।
জিএম কাদের বলেন, বিনিয়োগ কমবে কেন। এই অবস্থার সৃষ্টি হলো কেন, ৪০-৪৫ বিলিয়ন ডলারের রিজার্ভ হঠাৎ জিরো হলো কেন। এই রিজার্ভ কই গেলো। এসব জানার অধিকার আমাদের আছে। ইমপোর্ট করতেই পারছে না সরকার। মিল ফ্যাক্টরিগুলো চলতে পারছে না কাঁচামালের অভাবে। দেশের মানুষ বেকার হয়ে যাচ্ছে। অসহনীয় পরিবেশ থেকে সাধারণ মানুষ মুক্তি চায়। কিন্তু আমরা মুক্তি দেখতে পারছি না।
তিনি আরো বলেন, সম্প্রতি ডোনাল্ড লু সফরে এসে বললো আমেরিকান অনেক কোম্পানি এখানে বিনিয়োগ করছে কিন্তু তারা প্রফিট নিয়ে যেতে পারছে না দেশে। এসব কারণে এ দেশে কেউ আর বিনিয়োগ করতে চাইবে না। তাছাড়া এ সরকার প্রচুর লুটপাট করছে। বিদ্যুৎ আর গ্যাস খ্যাতে সীমাহীন লুটপাট হয়েছে, এখনও হচ্ছে। বিদেশে প্রচুর টাকা পাচার হয়েছে। যার কারণে আজ আমাদের দেশের এই অবস্থা। এর আমরা পরিত্রাণ চাই।
আওয়ামীলীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আওয়ামীলীগের ওবায়দুল কাদের অনেক কথাই বলেন, বলছেন। ব্যক্তিগতভাবে আমি ওনাকে খুবই শ্রদ্ধা করি। তিনি বলেন আওয়ামীলীগ অনেক শক্তিশালী হয়েছে। আসলে এই শক্তি কি দানবীয় শক্তি না শুভ শক্তি। দানবীয় শক্তি যদি হয়ে থাকে তাহলে তা আমরা পছন্দ করি না। সাধারণ জনগণ তা পছন্দ করে না।
তিনি আরো বলেন, বাংলাদেশের সবচেয়ে পুরোনো রাজনৈতিক দল হিসেবে আওয়ামীলীগ তার নিজস্ব বৈশিষ্ট্য হারিয়ে ফেলেছে। দল হিসেবে তারা রাজনৈতিক এজেন্ডা হারিয়ে ফেলেছে। এখন তারা কিছু পেশাজীবী আর সরকারি কর্মকর্তা নিয়ে দল চালাচ্ছে। আগে আওয়ামীলীগ সাধারণ মানুষের কথা ভাবত। মানুষ আওয়ামী লীগের ছায়া তলে বিশ্রাম নিতে পারতো। এখন আর সেই দিন নেই। এখন আর পারে না। তারা এমন কিছু হাস্যকর ও অপ্রয়োজনীয় কিছু করছে যার কারণে আওয়ামীলীগ এখন দেশের মানুষের থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে।
সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলার সময় উপস্থিত ছিলেন জাপা চেয়ারম্যানের উপদেষ্টা ও জেলা জাতীয় পার্টির আহবায়ক আলা উদ্দিন মিয়া, মহানগর জাতীয় পার্টির সাধারণ সম্পাদক এস এম ইয়াসীর, কেন্দ্রীয় সাংস্কৃতিক সম্পাদক আজমল হোসেন লেবু, কেন্দ্রীয় সদস্য লোকমান হোসেনসহ অন্যান্য নেতৃবৃন্দ।