ঢাকা ১২:২৮ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ১৭ মার্চ ২০২৫, ২ চৈত্র ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
শিরোনাম ::
জুলাই: মাতৃভূমি অথবা মৃত্যু গ্রন্থের প্রকাশনা অনুষ্ঠানে উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ প্রসঙ্গ: স্বাধীনতার ঘোষণা এবং জাতির জনক- গাজী আব্দুল কাদির মুকুল সিলেট অনলাইন প্রেসক্লাবের বার্ষিক সাধারণ সভা ও ইফতার মাহফিল সম্পন্ন এসজিএমএসসি অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশনের ইফতার ও দোয়া মাহফিল আট জন বিশিষ্ট ব্যক্তি পাচ্ছেন ২০২৫ সালের স্বাধীনতা পুরস্কার যুক্তরাজ্য প্রবাসী হযরত শাহজালাল (র) কামিল মাদ্রাসার এতিম শিক্ষার্থীদের মাঝে মোট দুই লক্ষ টাকা প্রদান হাসান ফাউন্ডেশন এর অর্থায়নে খাদ্য সামগ্রী মাদ্রাসা ও এতিমখানায় বিতরণ সিলেট কতোয়ালী থানার অভিযানে জয় বাংলা ব্রিগেড সদস্য বাবুল আহমদ গ্রেফতার ওসমানীনগরে প্রবাসী পরিবার ও পুলিশের উপর হামলার ঘটনায় ১২ জন আটক যুক্তরাজ্য প্রবাসী আরকান আহমদের পক্ষ থেকে মাদ্রাসার এতিম শিক্ষার্থীদের নগদ অর্থ প্রদান

জন্মান্ধ হাফেজ আলমগীর হোসেন মিলন ককটেল বিস্ফোরণ মামলার আসামি !

নোয়াখালী প্রতিনিধি:
  • আপডেট সময় : ১২:৩৪:৪৩ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৫ জানুয়ারী ২০২৪ ২২৩ বার পড়া হয়েছে

জন্ম থেকেই তিনি অন্ধ। কোরআনের হাফেজ। মসজিদে আজান দেয়ার কাজ করেন। ৫৫ বছর বয়সী আলমগীর হোসেন মিলন ককটেল বিস্ফোরণ মামলার আসামি। তিনিই নাকি পুলিশের ওপর ককটেল হামলা চালিয়েছেন। এমন এক মামলায় বুধবার হাইকোর্ট থেকে জামিন নিয়েছেন তিনি।

তার সঙ্গে মামলার অন্য ৩৪ আসামিও জামিন নিয়েছেন। নোয়াখালীর সেনবাগ থেকে তারা হাইকোর্টে এসেছিলেন জামিন নিতে। গত ২৮শে অক্টোবর নয়াপল্টনে বিএনপি’র সমাবেশ পণ্ড হওয়ার দিন রাতেই সেনবাগ সদরে ট্রাকে আগুন ও পুলিশের ওপর ককটেল হামলার অভিযোগে এই মামলা হয়। মামলার বিষয়ে মিলন বলেন, আমি চোখে দেখি না, ঠিকমতো চলাফেরাও করতে পারি না। জন্ম থেকেই অন্ধ। অন্যের সাহায্য ছাড়া চলতেও কষ্ট হয়।

তিনি আরও বলেন, ছেলেমেয়ে হাত ধরে মসজিদে নিয়ে যায়, পাঁচ ওয়াক্ত আজান দেই। অথচ এক মাস আগে পুলিশ আইস্যা কয়, আমি নাকি নাশকতা মামলার আসামি। আমি গাড়ি পোড়াইছি, বাসে আগুন দিছি। পুলিশের ওপর ককটেল মারছি। আমার নামে ওয়ারেন্ট আছে। এই কথা শুনে আমার মাথার ওপর আকাশ ভাইঙ্গা পড়ছে।

সেনবাগ উপজেলার কাদরা ইউনিয়নের চাঁনপুর গ্রামের বায়তুল আমান জামে মসজিদের খাদেম মিলন বলেন, আমি জীবনে কখনো রাজনীতি করিনি। অন্ধ মানুষ রাজনীতি করে কীভাবে? যে চলাফেরাই করতে পারে না, সে আবার রাজনীতি করে কেমনে? মিছিলে যায় কীভাবে? আমি কোথায়, কখন, কার গাড়ি পোড়াইছি তাও জানি না। আমাকে মিথ্যা মামলায় ঢুকানো হয়েছে। আমি এখন কার কাছে বিচার দেবো? ৫ সন্তানের সংসার মসজিদে খাদেমের চাকরি করে চালাই। এখন এই মামলা কীভাবে চালাবো? জীবনে কখনো আদালতেই যাইনি। এখন হাইকোর্ট পর্যন্ত যেতে হলো।

মামলার এজহারে দেখা যায়, ২৮শে অক্টোবর নয়াপল্টনে বিএনপি’র মহাসমাবেশের পরের দিন ২৯শে অক্টোবর নোয়াখালীর সেনবাগ উপজেলার বাসে আগুন ও পুলিশের ওপর ককটেল নিক্ষেপের দায়ে একটি মামলা করে পুলিশ। মামলা নং ৭(১০)২৩। এজহারে বিএনপি’র নির্বাহী কমিটির সদস্য ও সেনবাগ উপজেলা বিএনপি নেতা কাজী মফিজুর রহমানকে এক নম্বর আসামি করে উপজেলা বিএনপি’র বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীসহ মোট ৩৫ জনকে আসামি করা হয়। ওই মামলায় ২৬নং আসামি করা হয় দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী আলমগীর হোসেন মিলনকে। তবে এজহারে মিলনের জায়গায় নিলয় উল্লেখ করা হয়। তবে পিতার নাম একই রাখা হয়। বুধবার মিলনসহ ৩৫ জন জামিন নিতে হাইকোর্টে আসেন। মামলার এজাহার পর্যালোচনা করে আসামিদের ৬ সপ্তাহের আগাম জামিন দেন হাইকোর্ট। বিচারপতি নজরুল ইসলাম তালুকদার ও বিচারপতি কাজী ইবাদত হোসাইনের হাইকোর্টে বেঞ্চ এ জামিন আদেশ দেন।

এই মামলার আইনজীবী এডভোকেট বাকী মর্তুজা বলেন, মামলায় ঘটনাস্থল সেনবাগ থানার সেবারহাট এলাকার একটি স্কুলের সামনে দেখানো হয়েছে। তবে মামলার বাদী যাকে করা হয়েছে, তিনি শুধু সাদা কাগজে সই করেছেন। পরে কী হয়েছে তা তিনি জানেন না। আর ভোর সাড়ে ৬টার দিকে এই ঘটনা ঘটেছে বলে এজহারে বলা হয়েছে। এই সময়ে আসামিরা কেউ ঘুম থেকেই উঠেনি। তাহলে কীভাবে তারা আগুন দিলো? আমরা আদালতে বিষয়টি তুলে ধরেছি। আদালত সন্তুষ্ট হয়ে ৬ সপ্তাহের জামিন দিয়েছেন।

মামলার বাদী বাস ড্রাইভার ওমর ফারুক বলেন, এই মামলা ভিত্তিহীন। কাদের আসামি করা হয়েছে তা আমি জানি না। আমার গাড়িটি ট্রাক ছিল। নাম এম.আর.বি। আমরা ইটের খেপ টানি। ওইদিন সেনবাগ সেবারহাট এলাকায় কয়েকজন মানুষ এসে গাড়িতে আগুন দিয়ে দৌড়ে চলে যায়। তখন সবার মাথায় হেলমেট ছিল। আমি কাউকে দেখতে পারিনি। কিন্তু সেনবাগ থানা থেকে পুলিশ এসে আমাদের মামলা করতে চাপ দেন। আমি তখন বলেছি কে আগুন দিয়েছে আমি কাউকে দেখতে পাইনি কাদের আসামি দিবো? তখন পুলিশ বলেছে আপনি শুধু সাদা কাগজে সই করেন আসামি আমরা খুঁজে বের করবো। পরে আমি সই করে চলে আসছি। এরপরে কী হয়েছে আমি কিছু জানি না।

মামলার এক নম্বর আসামি বিএনপি’র নির্বাহী কমিটির সদস্য কাজী মফিজুর রহমান বলেন, এই মামলা একটি মিথ্যা মামলা। মামলার বাদীও বলেছে পুলিশ জোর করে সাদা কাগজে সই করে মামলা সাজিয়েছেন। রাজনৈতিক ষড়যন্ত্র করে এই মামলা দেয়া হয়েছে। তারা এতই বেকুব যে একজন অন্ধ মানুষকেও মামলায় জড়িয়ে দিয়েছে। এতে বোঝা যায় মামলাটি সাজানো ও ষড়যন্ত্রমূলক।

নিউজটি শেয়ার করুন

আপলোডকারীর তথ্য
ট্যাগস :

জন্মান্ধ হাফেজ আলমগীর হোসেন মিলন ককটেল বিস্ফোরণ মামলার আসামি !

আপডেট সময় : ১২:৩৪:৪৩ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৫ জানুয়ারী ২০২৪

জন্ম থেকেই তিনি অন্ধ। কোরআনের হাফেজ। মসজিদে আজান দেয়ার কাজ করেন। ৫৫ বছর বয়সী আলমগীর হোসেন মিলন ককটেল বিস্ফোরণ মামলার আসামি। তিনিই নাকি পুলিশের ওপর ককটেল হামলা চালিয়েছেন। এমন এক মামলায় বুধবার হাইকোর্ট থেকে জামিন নিয়েছেন তিনি।

তার সঙ্গে মামলার অন্য ৩৪ আসামিও জামিন নিয়েছেন। নোয়াখালীর সেনবাগ থেকে তারা হাইকোর্টে এসেছিলেন জামিন নিতে। গত ২৮শে অক্টোবর নয়াপল্টনে বিএনপি’র সমাবেশ পণ্ড হওয়ার দিন রাতেই সেনবাগ সদরে ট্রাকে আগুন ও পুলিশের ওপর ককটেল হামলার অভিযোগে এই মামলা হয়। মামলার বিষয়ে মিলন বলেন, আমি চোখে দেখি না, ঠিকমতো চলাফেরাও করতে পারি না। জন্ম থেকেই অন্ধ। অন্যের সাহায্য ছাড়া চলতেও কষ্ট হয়।

তিনি আরও বলেন, ছেলেমেয়ে হাত ধরে মসজিদে নিয়ে যায়, পাঁচ ওয়াক্ত আজান দেই। অথচ এক মাস আগে পুলিশ আইস্যা কয়, আমি নাকি নাশকতা মামলার আসামি। আমি গাড়ি পোড়াইছি, বাসে আগুন দিছি। পুলিশের ওপর ককটেল মারছি। আমার নামে ওয়ারেন্ট আছে। এই কথা শুনে আমার মাথার ওপর আকাশ ভাইঙ্গা পড়ছে।

সেনবাগ উপজেলার কাদরা ইউনিয়নের চাঁনপুর গ্রামের বায়তুল আমান জামে মসজিদের খাদেম মিলন বলেন, আমি জীবনে কখনো রাজনীতি করিনি। অন্ধ মানুষ রাজনীতি করে কীভাবে? যে চলাফেরাই করতে পারে না, সে আবার রাজনীতি করে কেমনে? মিছিলে যায় কীভাবে? আমি কোথায়, কখন, কার গাড়ি পোড়াইছি তাও জানি না। আমাকে মিথ্যা মামলায় ঢুকানো হয়েছে। আমি এখন কার কাছে বিচার দেবো? ৫ সন্তানের সংসার মসজিদে খাদেমের চাকরি করে চালাই। এখন এই মামলা কীভাবে চালাবো? জীবনে কখনো আদালতেই যাইনি। এখন হাইকোর্ট পর্যন্ত যেতে হলো।

মামলার এজহারে দেখা যায়, ২৮শে অক্টোবর নয়াপল্টনে বিএনপি’র মহাসমাবেশের পরের দিন ২৯শে অক্টোবর নোয়াখালীর সেনবাগ উপজেলার বাসে আগুন ও পুলিশের ওপর ককটেল নিক্ষেপের দায়ে একটি মামলা করে পুলিশ। মামলা নং ৭(১০)২৩। এজহারে বিএনপি’র নির্বাহী কমিটির সদস্য ও সেনবাগ উপজেলা বিএনপি নেতা কাজী মফিজুর রহমানকে এক নম্বর আসামি করে উপজেলা বিএনপি’র বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীসহ মোট ৩৫ জনকে আসামি করা হয়। ওই মামলায় ২৬নং আসামি করা হয় দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী আলমগীর হোসেন মিলনকে। তবে এজহারে মিলনের জায়গায় নিলয় উল্লেখ করা হয়। তবে পিতার নাম একই রাখা হয়। বুধবার মিলনসহ ৩৫ জন জামিন নিতে হাইকোর্টে আসেন। মামলার এজাহার পর্যালোচনা করে আসামিদের ৬ সপ্তাহের আগাম জামিন দেন হাইকোর্ট। বিচারপতি নজরুল ইসলাম তালুকদার ও বিচারপতি কাজী ইবাদত হোসাইনের হাইকোর্টে বেঞ্চ এ জামিন আদেশ দেন।

এই মামলার আইনজীবী এডভোকেট বাকী মর্তুজা বলেন, মামলায় ঘটনাস্থল সেনবাগ থানার সেবারহাট এলাকার একটি স্কুলের সামনে দেখানো হয়েছে। তবে মামলার বাদী যাকে করা হয়েছে, তিনি শুধু সাদা কাগজে সই করেছেন। পরে কী হয়েছে তা তিনি জানেন না। আর ভোর সাড়ে ৬টার দিকে এই ঘটনা ঘটেছে বলে এজহারে বলা হয়েছে। এই সময়ে আসামিরা কেউ ঘুম থেকেই উঠেনি। তাহলে কীভাবে তারা আগুন দিলো? আমরা আদালতে বিষয়টি তুলে ধরেছি। আদালত সন্তুষ্ট হয়ে ৬ সপ্তাহের জামিন দিয়েছেন।

মামলার বাদী বাস ড্রাইভার ওমর ফারুক বলেন, এই মামলা ভিত্তিহীন। কাদের আসামি করা হয়েছে তা আমি জানি না। আমার গাড়িটি ট্রাক ছিল। নাম এম.আর.বি। আমরা ইটের খেপ টানি। ওইদিন সেনবাগ সেবারহাট এলাকায় কয়েকজন মানুষ এসে গাড়িতে আগুন দিয়ে দৌড়ে চলে যায়। তখন সবার মাথায় হেলমেট ছিল। আমি কাউকে দেখতে পারিনি। কিন্তু সেনবাগ থানা থেকে পুলিশ এসে আমাদের মামলা করতে চাপ দেন। আমি তখন বলেছি কে আগুন দিয়েছে আমি কাউকে দেখতে পাইনি কাদের আসামি দিবো? তখন পুলিশ বলেছে আপনি শুধু সাদা কাগজে সই করেন আসামি আমরা খুঁজে বের করবো। পরে আমি সই করে চলে আসছি। এরপরে কী হয়েছে আমি কিছু জানি না।

মামলার এক নম্বর আসামি বিএনপি’র নির্বাহী কমিটির সদস্য কাজী মফিজুর রহমান বলেন, এই মামলা একটি মিথ্যা মামলা। মামলার বাদীও বলেছে পুলিশ জোর করে সাদা কাগজে সই করে মামলা সাজিয়েছেন। রাজনৈতিক ষড়যন্ত্র করে এই মামলা দেয়া হয়েছে। তারা এতই বেকুব যে একজন অন্ধ মানুষকেও মামলায় জড়িয়ে দিয়েছে। এতে বোঝা যায় মামলাটি সাজানো ও ষড়যন্ত্রমূলক।