ধর্ষণ ও অপহরণের অভিযোগের একদিনের মাথায় তরুণী’র অস্বীকার !

- আপডেট সময় : ০৪:২২:৪৪ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ২৯ জানুয়ারী ২০২৪ ৭৭ বার পড়া হয়েছে
খুলনায় ধর্ষণ ও অপহরণের শিকার হওয়ার অভিযোগকারী সেই তরুণী একদিনের মাথায় এবার বলছেন ভিন্ন কথা। রোববার রাত পৌনে ১১টায় সোনাডাঙ্গা থানায় নিজেই হাজির হয়ে দাবি করেন, তাঁকে ধর্ষণ কিংবা অপহরণ করা হয়নি।
আগেরদিন ডুমুরিয়া উপজেলা চেয়ারম্যান ও জেলা আওয়ামীলীগের সদস্য গাজী এজাজ আহমেদের বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগ করেছিলেন ওই তরুণী। সে সময় তিনি দাবি করেন, বিয়ের প্রতিশ্রুতি দিয়ে দীর্ঘদিন তার সঙ্গে মেলামেশা করেছেন এজাজ।
বিয়ের জন্য চাপ দিলে শনিবার রাতে ফোন করে ডেকে নিয়ে ব্যক্তিগত কার্যালয়ে তাকে আবারও ধর্ষণ করেন– এ অভিযোগের ২৪ ঘণ্টার মাথায় ওই তরুণী ও তার মা একটি মাইক্রোবাসে করে রোববার রাতে থানায় হাজির হন। এরপর পুলিশ তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করে। জিজ্ঞাসাবাদ শেষে রাত ১২টার দিকে ওই মাইক্রোবাসে করেই বাড়িতে যান তরুণী।
জিজ্ঞাসাবাদের পর গণমাধ্যমের মুখোমুখি হন তরুণী। এ সময় দাবি করেন, ধর্ষণের শিকার হননি তিনি। তাকে তার ভাই এবং সাবেক এক ইউপি চেয়ারম্যান খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ওয়ান স্টপ ক্রাইসিস সেন্টারে নিয়ে ভর্তি করেছিলেন। রোববার বিকেলে সেখান থেকে ছাড়পত্র পাওয়ার পর তিনি গাড়িতে নিজেই রওনা দেন এবং যশোরের কেশবপুরে এক আত্মীয়ের বাড়িতে গিয়েছিলেন। এরপর পুলিশ তাদের খবর দেওয়ায় তারা থানায় এসেছেন।
কেন ওই দু’জন তাকে হাসপাতালে নিয়ে গিয়েছিলেন – সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নে তিনি কোনো জবাব দেননি। নিজে মানসিকভাবে বিপর্যস্ত দাবি করে অতিরিক্ত প্রশ্ন করলে ‘পাগল’ হয়ে যাবেন বলেও দাবি করেন।
এ বিষয়ে সোনাডাঙ্গা থানার পরিদর্শক (তদন্ত) আমিরুল ইসলাম জানান, জিজ্ঞাসাবাদে ওই তরুণী জানিয়েছেন, ডুমুরিয়া উপজেলা চেয়ারম্যান গাজী এজাজ আহমেদ তাকে ধর্ষণ করেননি। এ ছাড়া খুমেক হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র পাওয়ার পর তাকে কেউ অপহরণও করেনি। নিজেই এক আত্মীয়ের বাড়িতে গিয়েছিলেন।
আমিরুল ইসলাম আরও জানান, অপহরণের অভিযোগে আটক করা এজাজের চাচাতো ভাই গাজী তৌহিদুজ্জামানের বিরুদ্ধেও ওই তরুণীর কোনো অভিযোগ নেই। সে কারণে তাকে ছেড়ে দেওয়া হবে।
এদিকে এই ঘটনার পর থেকে তরুণীর ভাইয়ের মোবাইল ফোন বন্ধ। অন্যদিকে, উপজেলা চেয়ারম্যান এজাজও লোকচক্ষুর আড়ালে রয়েছেন। তার মোবাইল ফোনও বন্ধ পাওয়া যায়। এর আগে ধর্ষিত হওয়ার পর শনিবার রাতে খুলনা মেডিকেল কলেজ (খুমেক) হাসপাতালের ওয়ানস্টপ ক্রাইসিস সেন্টারে (ওসিসি) ভর্তি হন বলে জানিয়েছিলেন তরুণী। তবে ছাড়পত্র পেয়ে সেখান থেকে রোববার বিকেল ৫টার দিকে বের হলে মা-সহ তাকে দুর্বৃত্তরা অপহরণ করে বলে জানান। এসময় স্থানীয়রা ডুমুরিয়ার রুদাঘরা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান গাজী তৌহিদুজ্জামানকে ধরে পুলিশে দেন।
এ ব্যাপারে বাংলাদেশ মানবাধিকার বাস্তবায়ন সংস্থা খুলনার সমন্বয়কারী অ্যাডভোকেট মোমিনুল ইসলাম জানিয়েছিলেন, ধর্ষণের শিকার তরুণীকে ওসিসি থেকে ছাড়পত্র দেওয়া হবে জানতে পেরে সাংবাদিক ও মানবাধিকারকর্মীরা খুমেক হাসপাতালের ওসিসির সামনে অপেক্ষা করছিলেন। মাকে নিয়ে ওই তরুণী বের হলে একদল দুর্বৃত্ত জোর করে মাইক্রোবাসে তুলে নিয়ে চলে যায়। এসময় ঘটনাস্থল থেকে স্থানীয়রা গাজী তৌহিদুজ্জামানকে ধরে সোনাডাঙ্গা থানা পুলিশের কাছে হস্তান্তর করেন।
ওই তরুণীর ভাইয়ের অভিযোগ, শনিবার রাতে মোবাইলে ফোন করে তার বোনকে শাহপুর এলাকায় উপজেলা চেয়ারম্যান গাজী এজাজ তার ব্যক্তিগত কার্যালয়ে ডেকে নিয়ে ধর্ষণ করেন। বিয়ের প্রতিশ্রুতি দিয়ে দীর্ঘদিন ধরেই বোনকে ধর্ষণ করে আসছেন তিনি। শনিবার তার বোন চেয়ারম্যানকে বিয়ে করার জন্য চাপ দিলে তাড়িয়ে দেন। এ বিষয়ে তারা আইনগত ব্যবস্থা নেবেন।
তবে অভিযোগ অস্বীকার করে গাজী এজাজ বলেছিলেন, ‘এ রকম কোনো ঘটনা ঘটেনি। সামনে উপজেলা পরিষদ নির্বাচন, কেউ হয়তো ওই তরুণীকে দিয়ে আমার বিরুদ্ধে এসব অভিযোগ করাচ্ছে।’