ওসমানীনগরে আনসার ভিডিপির সদস্যদের নির্বাচনকালিন ভাতা আত্মসাতের অভিযোগ !

- আপডেট সময় : ১১:১০:৪৭ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৮ জানুয়ারী ২০২৪ ৩০০ বার পড়া হয়েছে
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সিলেটের ওসমানীনগরে দায়িত্ব পালনকারী আনসার ভিডিপির সদস্যদের ভাতার অর্থ আত্মসাতের চেষ্টার অভিযোগ উঠেছে। এই নিয়ে উপজেলা জুরে সৃষ্টি হয়েছে আলোচনা সমালোচনা। অভিযোগ রয়েছে উপজেলার কয়েকজন ইউনিয়ন দলনেতা আনসার সদস্যদের নিয়ে উপজেলা জোড়ে তৈরি করেছেন শক্ত সিন্ডিকেট। এই সিন্ডিকেটের মাধ্যমে নির্বাচনী দায়িত্ব পালনের পর বিরাট অংকের অর্থ আত্মসাতের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন তারা।
জানা গেছে, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ৫৪টি ভোট কেন্দ্রে প্রতি টিমে ১২জন করে মোট ৬৪৮ জন আনসার সদস্য দায়িত্ব পালন করেছেন। টিমে প্রতি কেন্দ্রে ৮ জন পুরুষ ও ৪ জন মহিলা ছিলেন।
সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ এই উপজেলায় এখনো কোন ভাতা বন্টন না করলেও অনেকেই ভাতার টাকা পেয়েছেন, তবে সঠিক ভাতা পায়নি কেউ। ভাতা লুটপাট করার উদ্দেশ্যে একটি সিন্ডিকেট তাদের নিজস্ব তহবিল থেকে অল্প কিছু টাকা দায়িত্ব পালনকারী আনসার ভিডিপির সদস্যদের হাতে দিয়ে বিদায় করে দিয়েছেন।
দায়িত্ব পালনকারী কয়েকজন আনসার সদস্যরা জানান, পিসি ও এপিসি সদস্যদের ৬দিনে ৬হাজার ৩ শত টাকা ও শুকনা খাবার ৫’শ টাকা ও যাতায়াত খরচ বাবত ২’শ টাকা মিলিয়ে একজন পিসি ও এপিসির দায়িত্ব পালনে মোট ভাতা ৭ হাজার টাকা। সাধারণ সদস্যদের ছয়দিনে ৬ হাজার টাকা ভাতা ও শুকনা খাবার ৫ শত ও যাতায়াত খরচ ২ শত টাকা মিলিয়ে ৬ হাজার ৭শ টাকা পাওয়ার কথা। তবে এখন পর্যন্ত কোন সদস্য পূর্ণ টাকা পাননি। তাদের মধ্যে কেউ পেয়েছেন ১ হাজার, ১২শ টাকা কেউবা ১৫শ টাকা।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আনসার ভিডিপির দায়িত্ব পালনকারী উপজেলার মিনা বেগম (ছদ্মনাম) বলেন, আনসার ভিডিপির ইউনিয়ন দলনেতা আঙ্গুর আলীর মাধ্যমে আমিসহ ৪ জন মহিলা সাদিপুর ভোট কেন্দ্রে দায়িত্ব পালন করি। আমাদের ৪ জনকে ভোটের দিন ২৫ টাকা হারে নাস্তার জন্য ১’শ টাকা দিয়েছেন। ভোটের পরদিন জন প্রতি ১ হাজার টাকা হারে ৪ হাজার টাকা দেয়া হয়েছে। আমরা আর কোন টাকা পাইনি।
একই গ্রামের আনসার সদস্য রফিকুন্নেছা (ছদ্মনাম) অভিযোগ করে বলেন, তিনি আনছার ভিডিপির মহিলা সদস্য রুবিনা বেগমের মাধ্যমে উপজেলার বুরুঙ্গা ইকবাল আহমদ উচ্চ বিদ্যালয় ভোট কেন্দ্রে দায়িত্ব পালন করেছেন। পরবর্তীতে রুবিনা বেগম তার হাতে ১ হাজার টাকা ধরিয়ে দেন। আর কোন টাকা পাওনা নাই বলে তাকে জানানো হয়েছে।
শফিক নামে আরেক ভূক্তভুগী জানান, রুবিনা বেগমের সাথে দায়িত্ব পালন করেছি। আমাকে ১ হাজার টাকা ধরিয়ে দেয়া হয়।
এই বিষয়ে অভিযুক্ত রুবি বেগমের (ছদ্মনাম) সাথে যোগাযোগ করলে তিনি বলেন, ২০ জন সদস্যদের ২০ হাজার টাকা চুক্তিতে গোয়ালাবাজার ইউনিয়ন দলনেতা শশাংক পালের মাধ্যমে দায়িত্বে প্রেরণ করেছিলাম। নির্বাচনের পরে আমি ২০জন সদস্যদের হাতে ২০ হাজার টাকা দিয়ে দিছি। আমার সাথে চুক্তি অনুযায়ী তারা নগদ টাকায় ডিউটি করেছে। তাদের আর কোন পাওনা নেই তবে আমি এখনো কোন টাকা পাইনি কত টাকা ভাতা পাবো তা আমিও জানিনা।
অভিযোগের বিষয়ে ইউনিয়ন দলনেতা শশাংক পাল বলেন, তিনি উপজেলা পরিষদ কেন্টিনে পান-সিগারেট বিক্রিতে ব্যস্ত থাকায় অভিযোগের বিষয়ে তিনি কোন মন্তব্য করতে রাজি নয় এব্যাপারে তার উর্ধতন কর্মকর্তাদের সাথে যোগাযোগ করারা জন্য বলেছেন।
উপজেলা আনসার ভিডিপি কর্মকর্তা আবু সাঈদ জানিয়েছেন এখন পর্যন্ত দায়িত্ব পালনকারী আনসার সদস্য কারো ভাতা বন্টন করা হয়নি। তারা দায়িত্ব পালনের ভাতার টাকা কি ভাবে পেলেন তা আমার জানা নেই। ভাতা টাকা আসার পর আমরা সঠিক নিয়মে বিতরণ করবো।
জনপ্রতি ভাতার টাকার পরিমান জানতে চাইলে তিনি বলেন, বিষয়টি আমি অবগত হইনি। টাকা আসার পর পরিমান জানা যাবে।
এই বিষয়ে সিলেট জেলা আনসার ভিডিপি কমান্ড্যান্ট আলী রেজা রাব্বি বলেন, দায়িত্ব পালনকারী আনসার সদস্যদের মধ্যে এখনো ভাতা বিতরণ করা হয়নি। আমরা অনলাইনের মাধ্যমে সবার ভাতা বিতরণ করবো। তবে কেউ যদি দায়িত্ব পালনের পর এ পর্যন্ত ভাতার টাকা পেয়ে থাকেন এই বিষয়ে আমি অবগত নই। ভাতার পরিমানের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি তাৎক্ষনিক বলতে পারেননি।
তবে, একাধিক আনসার সদস্যরা জানিয়েছেন তাদের কাছ থেকে বিকাশ বা নগদ মাধ্যমে টাকা প্রেরণের কোন তথ্য এখন পর্যন্ত নেয়া হয়নি তাহলে কর্মকর্তারা কার বিকাশে টাকা প্রেরন করবেন তা তারা বুঝতে পারছেন না।
তবে সারাদেশে একই নিয়মে ভাতা প্রদান করা হবে বলে নিশ্চিত করেছেন এক উপজেলা আনসার ভিডিপির অফিসার।
তিনি জানান, নির্বাচনের দিন দায়িত্ব পালনকারীদের হাতে ৫শত টাকা দিয়ে দেওয়া হয়েছে এবং সাধারণ সদস্যদের অবশিষ্ট ৬ হাজার ২শ টাকা আগামী ২২ জানুয়ারী তার উপজেলায় বিতরণ করা হবে। তবে প্রাপ্য ভাতা থেকে বিধি মোতাবেক ২শ টাকা হারে কর্তন করা হবে।
বি:দ্র: নিরাপত্তার কথা চিন্তা করে এখানে ছদ্মনাম ব্যবহার করা হয়েছে।