
৫৫ বছরের শিক্ষকতা জীবনের ইতি টেনে অবসরে গেলেন অধ্যক্ষ মাজহারুল মান্নান
- By Power --
- Monday, 17 Aug, 2020
তাসলিমুল হাসান সিয়ামঃ
উত্তর জনপদের অন্যতম সেরা বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান আহম্মদ উদ্দিন শাহ্ শিশু নিকেতন স্কুল ও কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক মাজহারউল মান্নান স্বেচ্ছায় চাকরি ছেড়ে দিলেন। এই সাথে তিনি তার ৫৫ বছরের বর্ণাঢ্য শিক্ষকতা জীবনের অবসান ঘটালেন।
গত ১০ আগস্ট প্রতিষ্ঠানের সভাপতি বরাবর নানাবিধ প্রতিকূলতার কথা উল্লেখ করে তিনি স্বেচ্ছা অব্যাহতি গ্রহণের আবেদন করেন। রবিবার (১৬ আগস্ট) গভর্নিং বডির এক সভায় তা গৃহীত হয়।
১৯৯৯ সালে কারমাইকেল কলেজ থেকে অবসর গ্রহণ করার পর তিনি এই বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে উপাধ্যক্ষ হিসেবে যোগদান করেন। ২০১৬ সালে অধ্যক্ষ প্রফেসর মুহাম্মদ রমজান আলীর মৃত্যু হলে তিনি তার স্থলাভিষিক্ত হন। তার ছাত্র ও অভিভাবকদের অনেকেই মনে করেন, অধ্যাপক মান্নান ২০ বছরে প্রতিষ্ঠানটির ফলাফল ও শৃঙ্খলায় ব্যাপক পরিবর্তন নিয়ে আসেন।
সরকার কিংবা অন্য কোনো উৎস থেকে কোনো প্রকার সাহায্য সহযোগিতা ছাড়াই এর বিশাল অবকাঠামো, বিপুল পরিমাণ স্থাবর সম্পদ, পাবলিক পরীক্ষার ঈর্ষণীয় ফল, হাজার হাজার শিক্ষার্থীর ভর্তির চাপসহ নানাবিধ উন্নতির কারণে এই প্রতিষ্ঠান এতদঞ্চলে শিক্ষার বাতিঘর বলে খ্যাতি অর্জন করে। অভিভাবকদের কাছে এই প্রতিষ্ঠানের সবচেয়ে আকর্ষণীয় দিক হলো শিক্ষার্থীদের শৃঙ্খলা ও নিরাপত্তা। আর এটার মূল কারিগর ছিলেন মাজহারউল মান্নান। তিনি তার কলেজ শিক্ষকতা জীবন শুরু করেন ১৯৬৭ সালে নলডাঙ্গা কলেজের প্রতিষ্ঠাতা (ভারপ্রাপ্ত) অধ্যক্ষ হিসেবে। এরপর গাইবান্ধা কলেজে দীর্ঘদিন চাকুরি করার পর বদলী হয়ে যান রংপুর কারমাইকেল কলেজে। তিনি সেখানেই ১৯৯৯ সালের অক্টোবরে অবসর গ্রহণ করেন। তুমুল ছাত্রপ্রিয়, তারুণ্যদীপ্ত এই প্রবীণ শিক্ষক বহুমাত্রিক প্রতিভার অধিকারী।
তিনি একাধারে শিক্ষক, লেখক, সমাজসেবী ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব। তার বেশ কয়টি প্রকাশনার মধ্যে ‘চোখ ভেসে যায় জলে’ শীর্ষক আত্মজৈবনিক গ্রন্থটি সারাদেশে ব্যাপক পাঠকপ্রিয়তা পেয়েছে। স্থায়ীভাবে অবসর গ্রহণ করার পর লেখালেখি ও দেশ ভ্রমণের মধ্য দিয়ে বাকী জীবন কাটাবেন বলে অধ্যাপক মান্নান এই প্রতিবেদককে জানান।
গাইবান্ধা নাগরিক পরিষদের আহবায়ক ও অভিভাবক এ্যাডভোকেট সিরাজুল ইসলাম বাবু বলেন, আহম্মদ উদ্দীন শাহ্ শিশু নিকেতন স্কুল এন্ড কলেজ থেকে স্যারের চলে যাওয়া বা থাকার বিষয়টি প্রতিষ্ঠানটির আভ্যন্তরীন বিষয়। তবে তিনি ব্যক্তিগতভাবে মনে করেন এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটির পড়ালেখা ও শৃঙ্খলা নিয়ে দেশ বিদেশে যে সুনাম রয়েছে তার জন্য স্যারের অবদান অপরিসীম। ফলে আরও কিছুদিন এই প্রতিষ্ঠানটিতে মাজহারউল মান্নান স্যারের পদচারণা থাকলে শিক্ষা এবং শৃঙ্খলায় সহায়ক হতো বলে মনে করেন তিনি।
এ প্রসঙ্গে সিপিবি প্রেসিডিয়াম সদস্য মিহির ঘোষ বলেন, অধ্যাপক মাজহারউল মান্নান মুক্ত চিন্তার একজন মানুষ, পাশাপাশি বার্ধক্য ওনাকে স্পর্শ করতে পারেনি। শিক্ষকতার দীর্ঘ জীবনে তার হাত দিয়ে অনেক শিক্ষার্থী জীবনে সফলভাবে প্রতিষ্ঠিত। আহম্মদ উদ্দীন শাহ্ শিশু নিকেতনের দায়িত্ব পালনের সুযোগ থাকলে শিক্ষার্থীরা স্যারের তত্তাবধানে আরও উপকৃত হতো বলে মত তার।
অভিভাবক ও সাংবাদিক রিক্তু প্রসাদ বলেন, মফস্বলের প্রতিষ্ঠানটির দেশজুড়ে খ্যাতি অর্জন করার পেছনে তার অবদান কেউই অস্বীকার করতে পারবেনা। শিক্ষার্থী বান্ধব, শিক্ষানুরাগী মানুষটির অবর্তমানে প্রতিষ্ঠানের সুনামের ধারাবাহিকতা ব্যহত হতে পারে বলে অনেকের মতো তিনিও মনে করেন।